আহলে হাদিস শায়েখ কাজী ইব্রাহীম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্যঃ " টাকা দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের কথা কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি! এগুলো ইমামদের ইজতেহাদি কথা! সুতরাং আমরা হাদীস বাদ দিয়ে কেনো ইমাম আবু হানিফার ইজতেহাদের উপর আমল করব?"
আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে কিছু ফেবু মুফতী আছেন, যারা ইতিমিধ্যে ফতোয়া দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন যে, হাদীসের কোথাও টাকা দ্বারা সদকা ফিতরা আদায় করার কথা নেই! সুতরাং খাবার দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে হবে!
বিষয়টি ছিল উত্তম, অনুত্তমের মাসআলা। ইমাম আবু হানিফা মতে টাকা দ্বারা দেওয়া উত্তম। ইমাম শাফেয়ীর মতে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা। উভয়ের পক্ষে দলীল রয়েছে! কিন্তু টাকা দ্বারা আদায়ের পক্ষে কোন দলীল নেই, এমন কথা মিথ্যুক শায়খদের পূর্বে কেউ বলেননি!
হানাফীদের কয়েকটি দলীল নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১. ইমাম বুখারী রহঃ হযরত মুয়ায রাঃ এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন বুখারী শরীফে। তিনি ইয়ামানবাসীকে বলেন-
ﻗَﺎﻝَ ﻣُﻌَﺎﺫٌ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻟِﺄَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﺍﺋْﺘُﻮﻧِﻲ ﺑِﻌَﺮْﺽٍ ﺛِﻴَﺎﺏٍ ﺧَﻤِﻴﺺٍ ﺃَﻭْ ﻟَﺒِﻴﺲٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻌِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﺬُّﺭَﺓِ ﺃَﻫْﻮَﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺎﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ
তোমরা তোমাদের সদকার মধ্যে কাপড় নিয়ে এসো খাদ্য দ্রব্যাদির স্থলে। সেটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদীনার সাহাবীদের জন্য অধিক উপযোগী। (বুখারী, হাদীস নং, ১১৪৭.শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত)
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এটাই বলেছেন। ইয়ামান বাসীর জন্য কাপড় ছিলো অধিকতর সহজ এবং উপযোগি, এজন্য তিনি সেটার নির্দেশ দিয়েছেন। আর বর্তমান যুগে টাকা অধিকতর সহজ এবং উপযোগি, এজন্য ফিকহে হানাফী অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর প্রদান করা উত্তম।
২. আতা রহঃ উমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ ؛ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺍﻟْﻌُﺮُﻭﺽَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺭِﻕِ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ
অর্থাৎ উমর রাঃ সদকার ক্ষেত্রে টাকা ইত্যাদি গ্রহণ করতেন।(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং, ১০৫৩৯. শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দাঃবাঃ তাহকীককৃত)
এবার আপনি বলুন, হযরত উমর রাঃ কি হাদেীসের বিপরীত আমল করেছেন? তিনি কি অনুত্তম আমল করেছেন?
৩. যুহাইর বলেন, আমি আবু ইসহাককে বলতে শুনেছি,
ﺃﺩﺭﻛﺘﻬﻢ ﻭﻫﻢ ﻳﻌﻄﻮﻥ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﺑﻘﻴﻤﺔ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ
তিনি বলেন, আমি সাহাবায়ে কেরামকে পেয়েছি, তারা রমযানের সদকাতে খাদ্যের
মূল্য পরিমাণ দিরহাম আদায় করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং,
১০৪৭২. শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দাঃবাঃ তাহকীককৃত)
এবার আপনি বলুন, সাহাবায়ে কেরাম কি তাহলে অনুত্তম কাজ করেছেন? উনারা
কি হাদীস জানতেননা! তাদের আমল কি রাসূলের হাদীস বিরোধি??
৪. প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী রহঃ এর ফতোয়া দেখুন, তিনি বলেন:
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﺗﻌﻄﻰ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ
অর্থাৎ, সদকায়ে ফিতর দিরহাম দ্বারা প্রদান করতে কোন সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১০৪৭১)
৫. কুররা রহঃ বলেন,
ﺟﺎﺀﻧﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻧﺼﻒ ﺻﺎﻉ ﻋﻦ ﻛﻞ ﺇﻧﺴﺎﻥ ﺃﻭ ﻗﻴﻤﺘﻪ
ﻧﺼﻒ ﺩﺭﻫﻢ
অর্থাৎ, আমাদের নিকট উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ এর চিঠি এসেছে যে, সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষ থেকে নিসফে সা’ খাবার অথবা অর্ধেক দিরহামের মূল্য গ্রহণ করা হবে।( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১০৪৭০)
.
দলীল আরো দেয়া যাবে। এবার আপনি বলুন, মাসআলাটি ইমাম আবু হানিফা রহঃ নিজে ইজতেহাদ করে বের করেছেন? নাকি অসংখ্য সাহাবী এবং তাবেয়ী এমন মত পোষণ করেছেন এবং আমল করেছেন?? এরপর যারা প্রচার করেন যে, টাকা দ্বারা আদায় করা সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি না, তাদের আসল
উদ্দেশ্য কী? নাকি তারা কারো অদৃশ্য হাতের ক্রীড়ারনকে পরিণত হয়েছেন??
মোহতারাম মুফতি Wakil Uddin Shohag
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!