Wednesday, November 23, 2016

তথাকথিত “আহলে হাদীস” চলমান শতাব্দীর অত্যন্ত চরপন্থী ও উগ্রবাদী একটি মতবাদের ছদ্মনাম

[ মুফতী রফীকুল ইসলাম মাদানী ]
মনগড়া একটি মতবাদ প্রচার তাদের লক্ষ্য, অমূলক ও অবান্তর কথা ও কাজের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত ও বিব্রত করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা মাযহাব অবলম্বীদেরকে “নবোদ্ভাসিত” বা তাক্বলীদ নামক বিদয়া’তে লিপ্ত বলে অপবাদ দিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের ন্যায় এমন অনেক দলই রয়েছে, যারা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। আর যারা নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, তারা অন্যদের সমালোচনা কীভাবে করতে পারে? তা আমার কেন, কারও বুঝে আসার কথা নয়। তাই পুস্তিকার সূচনালগ্নে আহলে হাদীস দাবিদার ভাইদেরকে তাদের জন্মকাল এবং উৎপত্তিস্থল স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যাতে করে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মাযহাব মানা বিদয়া’ত নাকি মাযহাব বিমুখী হওয়া বিদয়া’ত।প্রসিদ্ধ লা-মাযহাবী আলিম “নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান” তাঁর রচিত “তরজমানে ওহহাবিয়্যাহ”  নামক গ্রন্থে লিখেন-
خلاصۂ حال ہندوستان کے مسلمانوں کا یہ ہے کہ جب سے یہاں اسلام آیا۔۔۔ اس وقت سے لے کر آج تک یہ لوگ حنفی مذہب پر قائم رہے اور ہیں اور اسی مذہب کے عالم فاضل قاضی اور مفتی حاکم ہوتے رہے ہیں
“হিন্দুস্তানের মুসলমানদের অবস্থান হল, এ দেশে ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি সবাই হানাফী মাযহাবের উপরই প্রতিষ্ঠিত এবং আলিম, ফাজিল, ক্বাজী, মুফতী বিচারক এ সব সুমহান দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গ এ মাযহাব থেকেই হয়ে আসছে। তরজমানে ওহহাবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা নং – ১০“মুযাহেরে হক্ব” কিতাবের স্বনামধন্য লেখক মাওলানা “কুতুব উদ্দীন” তাঁর “তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম” গ্রন্থে লা-মাযহাবীদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যার সারসংক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করা হল-“সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, মাওলানা ইসমাইল শহীদ ও মাওলানা আব্দুল হাই (রহ.) পাঞ্জাবে আগমন করার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে চার মাযহাবের ইমামগণের তাক্বলীদ অস্বীকারকারী নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত লক্ষ্য করা যায়। যারা হযরত সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহ.)-এর মুজাহিদ বাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল, এদের মুখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী (মৃত-১২৭৫হি.) । তার এ ধরনের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকা-ের কারণে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহ.) ১২৪৬ হিজরীতে তাকে মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তখনই গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষ করে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহ.) এর খলীফা ও মুরীদগণ হারামাইন শরীফাইনের তদানীন্তন উলামায়ে কিরাম ও মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফাতওয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন সম্মানিত মুফতীগণ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম সর্বসম্মতিক্রমে মৌ. আব্দুল হক্ব ও তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারী ফিরক্বা বলে অভিহিত করেন এবং মৌ. আব্দুল হক্বকে হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করেন।। {এ ফাতওয়া ১২৫৪ হিজরীতে তাম্বীহুদ্দাল্লীন (تنبیہ الضالین) নামে প্রকাশ করা হয়, এখনো দেশের বিশিষ্ট লাইব্রেরীতে এর কপি সংরক্ষিত রয়েছে।}মৌ. আব্দুল হক্ব বেনারস পলায়ন করতঃ কোনভাবে আত্মরক্ষা পায়। সেখানে গিয়ে তার নবাবিষ্কৃত দলের প্রধান হয়ে সরলমনা জনসাধারণের মধ্যে তার বিষাক্ত মতবাদ ছড়াতে থাকে।
তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম , পৃ. ১৬ খ.২, আন-নাজাতুল কামেলা, পৃ.২১৪, তাম্বীহুদ্দাল্লীন, পৃ.৩১ তাইফায়ে মানসূরা-১০০ ইংরেজ আওর আহলে হাদীস- ১৭
উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মৌ. আব্দুল হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে লা-মাযহাবী বা আহলে হাদীস নামক নতুন মতবাদটির সূত্রপাত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা “ওহহাবী” হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের “মুহাম্মাদী” বলে প্রচার করতো। পরবর্তীতে ‘ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম’ এ মর্মে ফাতওয়া দিয়ে ইংরেজের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ সুযোগে তারা সরকারী কাগজ-পত্র থেকে “ওহহাবী” নাম রহিত করে “আহলে হাদীস” নাম বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়।
বিস্তারিত তথ্যাবলী অবিলম্বেই পেশ করা হবে , ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নবোদ্ভাসিত এ দলটিই আজ নিজেদের ব্যতীত অন্যান্য সবাইকে নবোদ্ভাসিত বা বিদয়া’তী বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। যা হাস্যকর তো বটেই , চরম পরিতাপের বিষয় হিসেবেও বিবেচিত।লা-মাযহাবী আলিম মৌলভী মুহাম্মাদ শাহজাহানপুরী (মৃত.১৩৩৮ হিজরী) তার নিজের মতবাদ সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে যেয়ে লিখেন-“সম্প্রতি হিন্দুস্তানে এমন একটি অপরিচিত মাযহাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার সম্বন্ধে জনসাধারণ মোটেই অবগত নয়। অতীতে এ মতাদর্শের কোন লোক কোথাও ছিল কিনা তা সন্দেহজনক। উপরন্তু তাদের নামইতো মাত্র ইদানীং শুনা যাচ্ছে। তারা নিজেদেরকে “মুহাম্মাদী” বলে দাবি করে। কিন্তু প্রতিপক্ষ তাদেরকে “গাইরে মুকাল্লিদ” বা “ওহহাবী” অথবা “লা-মাযহাবী” বলে আখ্যায়িত করে থাকে।”     । আল-ইরশাদ ইলা সাবীলির রাশাদ, পৃ.১৩, উল্লেখ্য , এ বইটি তাদের নিকট অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।এ জ্বলন্ত সত্যকে যে বা যারা অস্বীকার করবে তার বা তাদের প্রতি আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকবে হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে ভারতবর্ষে বা তামাম পৃথিবীর কোথাও নিজেকে “মুহাম্মাদী” “সালাফী” ইত্যাদি দাবি করেছে (?) অথবা নামের সঙ্গে বিশেষণ হিসেবে এ সকল শব্দ সংযুক্ত করেছে অথবা সমগ্র বিশ্বে কোথাও “আল-জামিউস সালাফী”, “মসজিদু আহলিল হাদীস”, “মাদরাসাতু আহলিল হাদীস”, “আল-মাদরাসাতুস সালাফীয়া”, “আল-জামিয়াতুস সালাফীয়া” ইত্যাদি নামে কোন মসজিদ-মাদরাসা-জামিয়া ছিল(?) এ মর্মে কোন ধরনের প্রমাণ পেশ করার যোগ্যতা থাকলে জনতার মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আর এ চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল লা-মাযহাবী ভাইদের প্রতিই বহাল থাকবে। অবশ্যই এ চ্যালেঞ্জ, দলীল প্রমাণের মাধ্যমে মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জের নযীর রয়েছে আল-কোরআনে। তাই এ চ্যালেঞ্জ টাকার চ্যালেঞ্জ নয়, কারণ টাকার চ্যালেঞ্জ তো তারাই করতে পারে যারা বিধর্মীদের দালালী করে কালো টাকার পাহাড় গড়ে নিয়েছে অথবা পেট্টো-ডলার অধিপতিদের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আর এ টাকার বলেই আজে-বাজে ভ্রান্ত মতবাদের উপর চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন ধরনের কাগজ/বই বিনামূল্যে বিতরণ করে সরলমনা জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার অপপ্রয়াস এখনও অব্যাহত রেখেছে।আলোচনার সমর্থনে বর্তমান আরবের অবস্থাটাও কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যায়। সাম্প্রতিককালে আরব বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লা মাযহাবীদের উগ্র তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। ১৯৯৭ খৃস্টাব্দের কথা। মদীনা ইউনিভার্সিটির জনৈক উস্তাদ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলছিলেন, আমাদের বাপ দাদা কোনোদিন এসব দেখেননি। শৈশবে আমাদের নজরে আসেনি, দেখতে পাইনি যৌবনকালেও এই লা-মাযহাবী মতবাদ। বর্তমানে শেষ যামানায় বার্ধক্যে উপনীত হয়ে কিছু যুবক শ্রেণীর মধ্যে এ প্রবণতা লক্ষ্য করছি। শায়খ নাছীরুদ্দীন আলবানী (মৃত. ১৯৯৯ইং) ও রবি আল-মাদখালীর ভক্তবৃন্দ কতিপয় আবেগ প্রবণ যুবক এই মতবাদ নিয়ে গজিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এদের অশ্লীল আচরণ, উগ্রতা ও বাড়াবড়ির স্বরূপ তুলে ধরেছেন আরব বিশ্বের অসংখ্য লিখকগণ। তন্মধ্যে বিশিষ্ট গবেষক, হাদীস বিশারদ ডক্টর মুহাম্মদ সাঈদ রামাদান আলবুয়াতী লিখেন-فقد عاش المسلمون قدیما والی الآن، وھم یعلمون بکل بداھۃ ووضوح، ان الناس ینقسمون الی مجتھدین ومقلدین، وان علی المقلد ان یتبع احد المجھدین ۔۔۔ الی ان ظھرت فئۃ فی عصرنا ھذا، فاجات الناس بشرع غریب جدید ۔۔۔ (مقدمہ 23)মুসলমানগণ পূর্বকাল থেকে অদ্যাবধি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সুস্পষ্টভাবে জেনে আসছেন যে, মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। কিছু হলো মুজতাহিদ আর অন্যরা তাদের মুকাল্লিদ বা অনুসারী। মুকাল্লিদদের উপর মুজতাহিদগণের অনুসরণ একান্তই অপরিহার্য। এ অবস্থায় হঠাৎ করে বর্তমানে আমাদের যুগে একটি দল নতুন করে বিকাশ পেয়েছে। তারা জনগণের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম ধরনের নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছে। (বইয়ের ভূমিকা পৃ.২৩)লেখক তাঁর রচিত-اللامذھبیۃ أخطربدعۃ تُھدِّدُ الشریعۃ الاسلامیۃ(“লা মাযহাবী মতবাদ মারাত্মক বিপদজনক বিদআতী দল ইসলামী শরীয়তের জন্য ভয়ংকর হুমকি”) নামক বইয়ে লামাযহাবীদের উৎপত্তির সূচনা, কারণ, তাদের বিপদসঙ্কুল কর্মকা- এবং শরীয়তের ক্ষেত্রে এদের হুমকীর স্বরূপ তুলে ধরেছেন। বইয়ের শিরোনামটিই তাদের কর্মকা-ের বর্ণনা দিচ্ছে। তবুও ১৪৪পৃষ্ঠার উক্ত বইটি পূর্ণ পড়ে তাদের উৎপত্তির রহস্য ও এদের স্বরূপ সন্ধানে সচেতন হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। মুআসসাসাতুর রিসালা বৈরুত, পো. বক্স নং ৭৪৬০ থেকে ১৯৮৪ খৃস্টাব্দে বইটির ৩য় সংস্করণ প্রকাশিত।  এছাড়া আমার নিকট থেকে আগ্রহীগণ এর ফটোকপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এভাবে মদীনা শরীফের প্রখ্যাত আলিম মসজিদে নববীর সুদীর্ঘকালের বরেণ্য উস্তাদ আল্লামা আতিয়্যা মুহাম্মদ সালিম প্রণীত التراویح اکثر من الف عام (এক হাজার বছরে তারাবীর ইতিহাস) নামক বইয়ের অন্তত ভূমিকাটি একবার পড়ার অনুরোধ করেই এ পর্বের ইতি টানছি।
লা-মাযহাবীদের উৎপত্তির মূল রহস্য
হক্ব ও বাতিলের লীলাক্ষেত্র এ পৃথিবী। যেখানেই হক্ব সেখানেই বাতিল। তবে হক্বের মোকাবিলায় বাতিলের বিকাশ সর্বদাই রহস্যজনক হয়ে থাকে, যা হয়ত ধর্মীয় বা রাজনৈতিক উৎস অথবা জীবিকা নির্বাহের সহজ উপায়, কিংবা সরকারের গোলামী ইত্যাদি কোন না কোন কারণ এর অন্তরালে নিহিত থাকেই। “ আহলে হাদীস” বা “সালাফী” নামের এ নতুন মতবাদের উৎপত্তির রহস্যও এর ব্যতিক্রম নয়। এ মর্মে তাদের দলেরই অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালক নবাব ছিদ্দীক্ব হাসান খানের কয়েকটি উক্তি আমাদের বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য বহন করে, যেমন তার রচিত গ্রন্থ “ তরজমানে ওহহাবিয়্যায়”  {পৃ.২/৩ }তিনি লিখেন-یہ آزادگی ہماری مذہب جدیدہ سے عین مراد قانون انگلشیہ ہے “نیز فرماتے ہیں فرماں رواں بھوپال کو ہمیشہ آزادگی مذہب میں کوشش رہی جو خاص منشا گورنمنٹ انڈیا کا ہے”“আমাদের নতুন মাযহাবে আযাদী (অর্থাৎ তাক্বলীদ না করা) বৃটিশ সরকারী আইনেরই চাহিদা মোতাবেক।”আহলে হাদীস দলের একাংশের নাম “গুরাবা আহলে হাদীস” এ অংশের নেতা মুহাম্মাদ মুবারকের উক্তি হল, “গুরাবা আহলে হাদীসের ভিত্তি হযরতে মুহাদ্দিসীনদের সঙ্গে মতানৈক্য করার জন্যেই রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে ইংরেজদের খুশী করাই ছিল এর বিশেষ উদ্দেশ্য।  { উলামায়ে আহনাফ আওর তাহরীকে মুজাহিদীন , পৃ.  ৪৮}ভারতবর্ষে লা-মাযহাবীদের প্রধান মুখপাত্র মিঞা নযীর হুসাইনের অন্যতম শিষ্য অকীলে আহলে হাদীস মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লিখেন-“اس گروہ اہل حدیث کے خیر خواہ وفادار، رعایا، برٹش گورنمنٹ ہونے پر ایک بڑی روشن اور قوی دلیل ہے کہ یہ لوگ برٹش گورنمنٹ کے زیر حمایت رہنے کو اسلامی سلطنتوں کے زیر سایہ رہنے سے بہتر سمجھتے ہیں”“ঐ আহলে হাদীস দল বৃটিশ সরকারের কল্যাণ প্রত্যাশী, চুক্তি রক্ষাকারী ও অনুগত হওয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ প্রমান হল ঃ তারা বৃটিশ সরকারের অধীনে থাকা কোন ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে থাকার চেয়ে উত্তম মনে করে।”  { আল-হায়াত বা’দাল মামাত, পৃ.৯৩}উল্লেখিত মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করার বিপক্ষে “আল-ইক্বতিছাদ -ফী মাসাইলিল জিহাদ” নামক গ্রন্থ রচনা করে। যাতে তিনি জিহাদ “মানছুখ” বা রহিত বলে ঘোষণা করেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি ইংরেজের বিশ্বস্ত ও ভাড়াটে গোলামে গণ্য হয়। আর লাভ করে টাকা-পয়সার বিরাট অংক।  { হিন্দুস্তান কী পহলী ইসলামী তাহরীক, পৃ.২১২, আহলে হাদীস আওর ইংরেজ পৃ.৮৭ }তাইতো তারই বিশিষ্ট শিষ্য মৌলভী তালতাফ হুসাইন লিখেন-“انگریز ی گورنمنٹ ہندوستان میں ہم مسلمانوں کیلئے خدا کی رحمت ہے”“হিন্দুস্তানে ইংরেজ গভর্নমেন্ট আমরা মুসলমানদের জন্য খোদার রহমত।”  { আল-হায়াত বা’দাল মামাত , পৃ.৯৩}সম্মানিত পাঠক সমাজ! ইংরেজ আমলে ইসলাম ও মুসলমানদের দুরবস্থার করুণ কাহিনী বলার অপেক্ষা রাখে না, যে দিন সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার এদেশের হাজার হাজার আলিম-উলামা ও মহামনীষীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিল, আর দ্বীপান্তরের কঠিন বন্দিশালায় নিক্ষেপ করেছিল লক্ষ লক্ষ তৌহীদী জনতাকে। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল ইজ্জতহারা মা-বোনদের গগন-বিদারী আর্তনাদে। জ্বালিয়ে দিয়েছিল হাজার হাজার মসজিদ-মাদরাসা, আর ভষ্মীভূত করেছিল লক্ষ কোটি কুরআন-কিতাব । তখনই হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) কর্তৃক দীপ্তকণ্ঠে ঘোষিত হল জিহাদের ফাতওয়া, এ ফাতওয়ার বলে উলামায়ে কিরাম ও সমগ্র তৌহীদী জনতা ঝাপিয়ে পড়েন আযাদী আন্দোলনের জিহাদে। শহীদ হন হাজার হাজার বীর মুজাহিদ। আর ঠিক এমনি এক করুণ মুহুর্তে “ আহলে হাদীস” দাবিদার দলটি সেই ইংরেজ সরকারকে “খোদার রহমত” বলে আখ্যায়িত করে, আর তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ হারাম বলে ফাতওয়া দিয়ে হালুয়া-রুটির সুব্যবস্থা করে। তারা কী চায়? কী তাদের উদ্দেশ্য? কোথায় তাদের গন্তব্য?উপরোক্ত তথ্যাবলী থেকে একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার ভারতবর্ষে মুসলমানদেরকে দ্বিধা বিভক্ত করতঃ তাদের আধিপত্য মজবুত ও বিস্তার করার মানসে যে সমস্ত হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, এরই ফলশ্রুতিতে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল কাদিয়ানী, বেরলভী ও তথাকথিত আহলে হাদীস নামক নতুন মতবাদ সমূহের। সুতরাং আজকের “আহলে হাদীস” তথা “লা-মাযহাবী” দল সে দিনের ঐ বৃটিশ জালিম তল্পীবাহকদেরই উত্তরাধিকারী ও দোসর।[color=magenta]ভারতবর্ষে লা-মাযহাবীদের প্রথম প্রবক্তা[/color]উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, লা-মাযহাবী বা আহলে হাদীস নামক নতুন দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মৌলভী আব্দুল হক্ব ইবনে ফজলুল্লাহ (মৃত. ১২৭৬ হিজরী) । যিনি তার নতুন মিশনের আস্তানা বেনারসে ক্বায়েম করেন। তার প্রতিষ্ঠিত ভারতবর্ষে আহলে হাদীস মতবাদের সেই প্রথম মিশন জামিয়া সালাফিয়া বেনারস আজো সেখানে অবস্থিত আছে।তবে নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান ও মৌলভী মুহাম্মদ শাহজাহানপুরী প্রমুখের ভাষ্যমতে এ দলটিকে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং সংঘবদ্ধ ও আত্মনিবেদিত মিশন হিসেবে রূপ দেন “শাইখুল কুল ফিল কুল” বা ’একচ্ছত্র মহান ব্যক্তিত্ব’ মাওলানা সাইয়্যেদ নযীর হুসাইন দেহলভী”। তিনি তার রচনা-বক্তৃতা ও অক্লান্ত মেহনতের মাধ্যমে নবজন্মা লা-মাযহাবী তথা আহলে হাদীস নামক মিশনটিকে জনসাধারণের মাঝে পরিচিত করে তুলেন।  { আল-ইরশাদ-ইলা সাবীলির রাশাদ, পৃৃঃ ১৩ আল-কালামুল মুফিদ, পৃ. ১৪৩

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!