সম্প্রতি বিখ্যাত দায়ী আল্লামা মুফতি তাকি উসমানির তাবলিগ জামাত বিষয়ে দেয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুক টুইটার ও হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে ওই ভিডিও। এতে মুফতি তাকি উসমানি তাবলিগ জামাত নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও জামাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের উদ্দেশ্য কিছু পরামর্শ দিয়েচেন। ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি তিনি সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি মাহফিলে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উর্দু থেকে বক্তব্যটি অনুবাদ করেছেন আওর ইসলামে’র দেওবন্দ প্রতিনিধি হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
আল্লামা তাকি উসমানি বলেন, সবকিছু বাদ দিয়ে একক মতাদর্শ অবলম্বন করা না দ্বীনের দাবি, না তাবলিগের মহান মনীষীদের কারো শিক্ষা৷ তাদের কেউই এমন তালিম দেননি৷ বরং এর বিপরীত বক্তব্যই আমি শুনেছি৷
কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে লেখাপড়া ছাড়া চিন্তা-ভাবনা না করে অনেকে জিম্মাদার হয়ে যাচ্ছেন, তারা না আবার দুনিয়াবাসীকে গোমারাহ করে দেন!
আল্লাহর ওয়াস্তে বিষয়টা ভালোভাবে বুঝুন৷ আর কেউ এখলাসের সাথে সংশোধন চাইলে, ভুল ধরিয়ে দিলে তাকে নিজের দুশমন ভাববেন না৷ তাকে নিজের বিরোধী মনে করবেন না৷
আমি পূর্ব থেকেই বলে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ! এই (তাবলিগ) জামাতের মাধ্যমে উম্মতের যতোটা ফায়দা হয়েছে তা অন্য কোন জামাতের মাধ্যমে হয়নি৷ এটা হযরত ইলিয়াস রহ. এর অন্তরের আগুন৷ যার নূর-আভা পুরো দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে৷
কিন্তু এর উদ্দেশ্য কি এটা যে তাবলিগ জামাতের সকল ব্যক্তি মাসুম আনিল খতা-ভুলের উর্ধ্বে? তাদের দ্বারা কোন ভুল হতেই পারে না! এবং তাদের ভুল ত্রুটিগুলো সংশোধনও করে দেয়া যাবে না! আর যখন কেউ কোনো ভুল ধরিয়ে দেয়া হয় তখন সে তাবলিগ-বিরোধী হয়ে যায়? আল্লাহর ওয়াস্তে এমন ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করুন৷ এমন মতাদর্শ আপনাদের এক ভিন্ন ফেরকায় রুপান্তরিত করবে এবং উম্মতে মুসলিমাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে৷
পড়ুন মুসা আল হাফিজের লেখা: কওমি মাদরাসা; দার্শনিক ভিত্তি ও অবদান
আর বিশেষত যারা উলামায়ে কেরাম রয়েছেন তাদের উচিত এমন চিন্তাচেতনা-মতাদর্শের মুলোৎপাটন করে সকলকে মধ্য পন্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা৷
হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. যখন আমার সম্মানিত পিতা মুফতি শফি রহ.-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতে আসলেন তখন তিনি অঝোরে কেঁদে ফেলেন৷ পরে বলেন, আলহামদু লিল্লাহ! (তাবলিগ) জামাতের কাজ পৃথীবির নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু হজরত আমার তো খুব ভয় হচ্ছে যে এটা ‘এস্তেদরাজ’ (গোমরাহি বা গোনাহের পথে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঢিল দেয়া) না হয়ে যায়! এর থেকে আল্লাহর পানাহ চাই৷
ইলিয়াস রহ. এমনটিই মনে করছিলেন৷ তখন আমার পিতাজি রহ. তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, না, এটা এস্তেদরাজ নয়৷
তিনি বললেন, দলিল কী এটার? উত্তরে হজরত শফি রহ. বলেন, যার থেকে এস্তেদরাজ প্রকাশিত হয় তার বিন্দু মাত্রও অনুভব হয় না যে এটা এস্তেদরাজ৷ আপনার মধ্যে যেহেতু ভয় অনুভব করছেন তাই এটা এস্তেদরাজ নয়৷ ইলিয়াস রহ. খুব আশ্বস্ত হলেন৷
এরপর তিনি বললেন, হজরত! ধীরে ধীরে এই জামাত (জামাতের নেতৃত্ব) আওয়াম-সাধারণদের হাতে চলে যাচ্ছে৷ আমার তো ভয় হয়, পরবর্তীতে এরা গুলু তথা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হয়ে যায়! তো হজরতের সেই আশংকা বাস্তবের দিকে হচ্ছে৷
অনেকের মধ্যে সহিহ ইলম নেই, আবার ছোট ছোট কোনো কথা যদিও তা এখলাস ও মুহাব্বত-শফকতের সাথেই বলা হোক না কেনো- তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে বিরোধিতাকারী বলে সাব্যস্ত করা হয়৷ বলে বেড়ানো হয় ওমুকে (তাবলিগ) বিরোধী৷ দোহাই আল্লাহর! এ ধরনের কাজ থেকে নিজে বিরত থাকুন অন্যকেও বিরত রাখুন৷
এখন আপানাদের (আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া) একটি ঘটনা বলছি…
আমাদের এখানে প্রতি রবিবার মজলিশ হয়৷ তার আগে জুমার দিন হতো৷ আমাদের নাজেম সালমান মাহমুদ সাহেব করতেন৷ তিনি একবার আমাকে লাসবেলা চক করাচির মসজিদে নোমান-এ বিষয়টি ঘোষণা করে দেয়ার জন্য বললেন৷ তার নির্দেশ ছিলো তাই জুমার পরে ঘোষণা করলাম৷ ঘোষণার পরে মহল্লার কিছুসংখক তাবলিগি সাথীরা এসে আমার কাছে আবেদন করলো মজলিশ যেনো জুমার দিন না করা হয়৷
আমি বললাম, কেনো?
তারা বললো, ওই দিন আমাদের ‘গাশত’ হয়৷ আমি বললাম, তাহলে মজলিশ আমরা এমন সময় করে নেবো যাতে সাংঘর্ষিক না হয়৷ এটাও তো গুরুত্বপূর্ণ কাজ! মাগরিব ও এশার পরে গাশত হয়৷ সুতরাং বয়ান আমরা আসরের পরে করে নেবো৷
তিনি বললেন, তাহলে তো যারা আপনাদের বয়ানে আসবে তারা আমাদের গাশতে আসবে না৷
আমি বললাম, এমনটা তো হতেই পারে৷ এখানে তো খারাবি-মন্দের কিছু দেখছি না! আমরাও তো তাবলিগ করছি৷ একথা শুনতেই তার মুখ থকে বেরিয়ে এলো- ‘আপনি তো দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন… আপনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।’
এখন আপনারাই বলুন, কেবল ‘গাশত’ করা-ই দীন? আর এখানে (মজলিসে) কুরআন-হাদিস শেখানো হচ্ছে, কুরআনের তাফসির করে মানুষকে শোনানো হচ্ছে- এগুলো দীন নয়!?
আমি বলবো, এগুলোই হচ্ছে গুলু-বাড়িবাড়ি৷ যা আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে৷ আর এসব কথা আলোচনা করা হলে অনেকে ক্রধান্বিত হয়ে যান৷ (আর বলতে থাকেন) আমরা তাদের বিরোধিতা করছি৷
আল্লাহ’র ওয়াস্তে এমন সব মানসিকতা পরিত্যাগ করুন৷ অন্যথায় এটা (বাড়াবাড়ি) কাজের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেবে৷ কাজের মধ্যে ক্ষতি সাধন করবে৷ এর মধ্যে দীনের কোনো ফায়দা নেই৷
(অবস্থা এমন যে) এই কাজ (তাবলিগ করা) বিশেষ কাজে পরিণত হয়ে গেছে৷ এই কাজ করবেন তো সব ঠিক আছে৷ এর বাইরে দীনের যেসব কাজ আছে তার যেনো কোনো হাকিকত-বাস্তবতা-অস্তিত্ব নেই, কোনও গুরুত্ব নেই! আল্লাহ পাক আমাদের গুলু থেকে, অতিরঞ্জন-অতি সংকোচন থেকে, সব ধরণের ফেৎনা থেকে হেফাজত করুন!
আমি আবরো বলছি, তাবলিগ জামাতের কাজ এটা মকবুল-ভালো কাজ৷ আপনাদের সাধ্যমতো অংশগ্রহণের আহ্বান করছি৷ যতোটা সম্ভব বেশির থেকে বেশি এখানে সময় লাগান৷ এতে নিজেরও ফায়দা, উম্মতেরও ফায়দা৷ কিন্তু ওই ধরনের হামাকত-আহাম্মকি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন, বিরত রাখুন৷
উনি বলেছেন ভাল কথা- অথচ অনেকেই এটাকে নিয়ে ফেতনা ছড়াচ্ছেন । কথা হক কিন্তু যথাযথ পাত্রে পরেনি ।
ReplyDelete