অন্ধ ভক্তদের কাছে তাদের শায়েখেরা লৌহ মানব। এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। দলীলের পাহাড়ের অধিকারী। একেকজন ভরা কলস। যেন সাক্ষাৎ পালোয়ান রুস্তম। বাকিরা সব খালি কলস। (ভরা ও খালি কলস শব্দটির উদ্ভাবনকারী শায়েখ কাজী ইব্রাহীম সাহেব)
কিন্তু বাস্তবতা শায়েখদের জানা।
আসলে কতটুকু দলীল-খুঁটির জোড় আছে? কতটা ষ্ট্রং দলীল? দুর্বল দলীলগুলো ধোপে টিকবে কি?
এসব কিছুই শায়েখদের বাগারম্বরতার যাঁতাকলে লুকিয়ে থাকে। ফলে আসল হাকীকত রয়ে যায় পর্দার আড়ালে। ভক্তদের চোখের অন্তরালে।
তাই তারা লাফান। ঝাড়ি দেন। চ্যালেঞ্জ করেন। কিন্তু আফসোস! যাদের ভরসায় গরম করে তুলেন এলাকা। সেই তাদের কাছে যেতেই তাদের আশার বেলুন ফুঁস করে যায় ফুটে। উড়ে যায় প্রত্যাশার ফুলানো বুকের বাতাসগুলো। চুপসে যায় মুখ। লজ্জায় অনেকেই ত্যাগ করেন বাচাল শায়েখদের সঙ্গ। তবে অনেকেই জেদের বশে আঁকড়ে থাকেন সেই অন্ধ ভক্তির যষ্ঠি।
ঘটনা মূলত এমনি। স্থান পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হয় সময়। বদলে যায় মানুষও। কিন্তু রয়ে যায় সেই পুরানো ইতিহাস। ভ্রান্ত দলের সেই পুরানো কাসুন্দি। সময় স্থানের বিবর্তনে পরিবর্তন হয় না। স্থানে-কালে-ভেদে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় স্থানে স্থানে।
আজও হল তা'ই।
আজকের স্থানটা কুমিল্লা সদরের ঝাউতলা মসজিদে আকসা।
অন্ধ ভক্তটার নাম জনাব নুরুল আমীন ভুঁইয়া এ্যাডভোকেট।
সমস্যা করছিলেন অনেক দিন থেকেই। মুসল্লিগণ বিরক্ত শায়েখ ভক্তটার আচরণে। এত জোরে আমীন বলেন যে, আশেপাশের মুসল্লিদের কান স্তব্ধ হবার জোগার।
এ কেমন আমীন হে? বলতে মনে চাইলে বল। পাশের জন শুনতে পায় এতটুকু জোরে বল। কিন্তু মুসল্লিদের নামাযে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এ কেমন আমীন? এ আমীন কোন কিতাবে লেখা আছে?
শুরু হল তর্ক। ভক্ত সাহেব গর্ব করে বললেনঃ হুম চ্যালেঞ্জ! আমাদের শায়েখ কাজী ইব্রাহীম সাহেবকে আনবো। বসার সাহস আছে আপনাদের?
মসজিদটির এক জুমআর খতীব কর্মঠ আলেমে দ্বীন মুফতী সামসুল হক জিলানী সাহেব রাজি হয়ে গেলেন প্রস্তাবে। ইচ্ছে ফিতনার সমাধান হোক।
যোগাযোগ করলেন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন, প্রজ্ঞাবান মুহাদ্দিস মুফতী আমজাদ সাহেবের সাথে।
ফের তারিখ দিয়ে শায়েখ ভক্ত দু'টি ডেট ঘুরালেন। অবশেষে নিজেই বসার নিশ্চয়তার একজন কাগজ কম্পোজ করালেন। সমন্বয়কারী হিসেবে সাইন করলেন। প্রথম সমন্বয়ক হিসেবে মসজিদটির সহসভাপতির নাম লিখে তার কাছ থেকেও দস্তখত আনলেন।
আলোচকের নাম দিলেন-
*শায়েখ কাজী ইব্রাহিম।
*মাওলানা সফিউল্লাহ।
*অধ্যক্ষ মাওলানা আলমগীর।
আর বিষয়?
১ নামাযে আমীন জোরে না আস্তে বলা উত্তম?
২ তারাবীহ নামাযের রাকাত সংখ্যা কত?
৩ নামাযে কোথায় হাত বাঁধা উত্তম?
৪ মুসল্লী ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে তার নামায হবে না?
দস্তখত করা উক্ত কাগজ পাঠিয়ে দিলেন মুফতী জিলানী সাহেবের কাছে।
ব্যস। এবার! এবারতো আর ডেট দিয়ে শায়েখদের না এনে কোন উপায় নেই। কথা হল, ২১শে এপ্রিল ২০১৭ ঈসাব্দ রোজ শুক্রবার শায়েখ কাজী ইব্রাহীম সাহেব কুমিল্লা আসবেন। জুমআ পড়াবেন এক মসজিদে। যে মসজিদে জুমআ পড়াবেন তার থেকে বেশি দূরে নয় ঝাউতলার আলোচ্য মসজিদে আকসা।
সুতরাং এবার কাজীকে আনা একদম সহজ। জুমআ পড়াতে আসলে এখানে আসতে সমস্যা কোথায়?
অধমের সাথে যোগাযোগ করলেন মুখলিস আলেমে দ্বীন মুফতী জিলানী সাহেব। আমি বললামঃ হযরত এসব করে কোন লাভ নেই। আমি লিখে দিতে পারবোঃ কাজী ইব্রাহীম যদি জানে যে, বাহাস হবে, তাহলে সেদিন তিনি উক্ত মসজিদের আশেপাশে যাবার সাহসও করবে না। আমি এ শায়েখকে ভাল করেই চিনি। ভক্ততো আর জানে না শায়েখের প্রকৃত হালাত। তাই অহেতুক লাফাচ্ছে। ঢাকা থেকে কষ্ট করে আমার যাবার কোন দরকার নেই।
কিন্তু শুক্রবার সাড়ে এগারটার দিকে জিলানী সাহেব ফোন করে জানালেন ভক্ত এ্যাডভোকেট সাহেব বলেছেন কাজী ইব্রাহীম সাহেব কুমিল্লা এসে গেছেন। তিনি আসবেন বাহাসে। তাই আপনাকে আসতেই হবে।
বললামঃ কুমিল্লা আসলেও বাহাসে আসবে না। অহেতুক না যাই।
তবু হযরতের পীড়াপীড়িতে আসলাম।
কিন্তু কী হল? সেই একই ঘটনা। একই ইতিহাস। মসজিদ কমিটির স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি ও আগ্রহ দিলে প্রশান্তি দিল। কিন্তু শায়েখদের পুরানো আচরণ আর ভক্তদের অন্ধত্ব মনে কষ্টের খোঁচাও অনুভব করাল।
একটি ফায়দাঃ
মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলঃ যেহেতু তারিখ ও সময় নিজে নির্দিষ্ট করেও তাদের শায়েখ উপস্থিত করাতে পারেনি। এর মানে তাদের দালিলীক ভিত্তি দুর্বল। সুতরাং এখন থেকে উক্ত মসজিদে জোরে আমীন বলাসহ লা-মাযহাবী সকল প্রকার আচরণ নিষিদ্ধ। কোন মুসল্লিই এমন আচরণ করতে পারবে না।
বন্ধ হল ফিতনার দুয়ার আলহামদুলিল্লাহ।
বিঃদ্রঃ
১
যাদের সন্দেহ আছে, তারা উক্ত মসজিদ পরিদর্শন করুন। বাস্তব পরিস্থিতি জানুন। যোগাযোগ করুন মসজিদ কমিটির সাথে।
কিন্তু যাচাই ছাড়া উক্ত সত্য ঘটনাকে নাটক, মিথ্যাচার ইত্যাদি বলে নিজের আমলনামায় গোনাহ লিপিবদ্ধ না করাতে অনুরোধ থাকবে।
মোহতারাম Lutfor Faraji সাহেবের টাইমলাইন থেকে,,,
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!