শায়খ আবু বকর আল যাজায়েরী আরবের বিখ্যাত আলেম। তিনি মসজিদে নববীর মুয়াল্লিম ছিলেন। মদিনা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন শায়খ নিয়মিত তার দর্সে উপস্থিত থাকতেন। তাবলীগ জামাত সম্পর্কে তার লিখিত একটি পুস্তিকা হল ‘আলকাউলুল বালীগ ফি জামাতিত্ তাবলীগ’। শায়খ বিন বায রাহঃ এ পুস্তাকাটি অনেককে তাবলীগ জামাত সম্পর্কে কনসেপ্ট ক্লিয়ার হওয়ার জন্য দিয়েছেন।
শায়খ আবুবকর আল জাযায়েরী তাঁর পুস্তিকা ‘আলকাউলুল বালীগ ফি জামাতিত্ তাবলীগ’ এর ‘আসারু দাওয়াতিত্ তাবলীগ ফিল আলম’ শিরোনামে বলেছেনঃ
“এখন আমরা এই জামাতের (তাবলীগ জামাত) উৎপত্তি, গঠনতন্ত্র, নিয়মনিতী ও তৎপরতা সম্পর্কে জানার পরে, এই জামাতের দাওয়াতের ইতিবাচক ও নেতিবাচক (যদি নেতিবাচক কোন নিদর্শন থাকে) নিদর্শনসমূহ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন মনে করি। তাহলে এবার বলি, আমি তাদেরকে উত্তর আফ্রিকা, মরোক্কো, আল্ জাযায়ের, তিউনিস এবং লিবিয়াতে দেখেছি। এমনি ভাবে বেলজিয়াম, হল্যান্ড, জার্মান এবং বৃটেনেও দেখেছি। আমেরিকা এবং ভারত উপমহাদেশে এদের তৎপরতা সম্পর্কে শুনেছি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাঁদের দাওয়াতের নিদর্শন সমূহ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। নিম্নে কয়েকটি নিদর্শন বর্ণনা করলাম –
(১) আনুনয় বিনয়ের সাথে নামায আদায়।
(২) ধর্মীয় নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করা। যথা মহিলাদের পর্দা, পুরুষদের দাঁড়ি, লম্বাকরণ এবং পাগড়ী ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে রাখা।
(৩) কথা কাজ ও আকীদা বিশ্বাস হিসেবে শিরকী আচরণ ও অনৈসলামিক কার্যকালাপ ছেড়ে দেওয়া।
(৪) দাওয়াতে তাওহীদকে গ্রহন করা এবং কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করা।
যখন আমি উত্তর আফ্রিকায় ছিলাম তখন তারা আমি যতদিন ছিলাম ততদিনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা গিয়ে আমার দরসসমূহ নিয়মিত শুনত। আমার দরস আলহামদুলিল্লাহ্ সলফের আকীদা বর্ণনা এবং শিরক, বিদআত ও কুসংস্কারাদির খন্ডনের ব্যাপারেই সাধারণ হয়ে থাকে। এতো উত্তর আফ্রিকার কথা।
ইউরোপে তাবলীগ দাওয়াতের অতি সুন্দর প্রভাব পড়েছে। তথায় ইসলামের প্রচার হয়েছে, মুসলিম কর্মচারীদের মধ্যে প্রসার হয়েছে। ফলে মসজিদ নির্মান হয়েছে, মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী রূপরেখা দাঁড়ি, পাগড়ী এবং কাপড় ইত্যাদিতে প্রকাশ পেয়েছে। ইসলামের প্রতি ডাকা হচ্ছে। অনেক খ্রিষ্টানেরা ইসলাম গ্রহন করছে। নও মুসলিমের সংখ্যা হল হাজার হাজার। এটা এমন একটি কাজ যা সকল একটি সশস্ত্র ইসলামী অভিযান ব্যাতীত সম্ভব ছিল না। এমনটি এক বাস্তব সত্য যা বাস্তবে অজ্ঞ বা অজ্ঞতার ভানকারী ব্যতীত অন্য কেউ অস্বীকার করবে না। আবার তারাও শুধু ব্যক্তিগত বা দলগত স্বার্থের কারণেই এরূপ করবে।
শত শত বছর চলে গেছে তখন ইউরোপে মুসলমানেরা ইসলাম প্রকাশ করতে পারেনি। আমেরিকা তো দূরের কথা ইউরোপের অন্য কোন দেশেও পারত না। অধিকাংশ কর্মচারী ও লেবারেরা ছিল তখন মদদী, নামায তরককারী এবং ভাষা, পোষাক, চরিত্র ও চালচলনে ছিলো ইউরোপীয়দের অনুসারী। পরে আল্লাহ পাক তাবলীগে জামাতকে এদেশে পাঠালেন। এরা ছিলেন ইসলামী হেদায়াত, আক্বিদা, ইবাদাত ও চরিত্র বহনকারী। আবার এদেশে তাবলীগি ভাইদের তৎপরতা ছিলো চুপি চুপি এবং অতি সহজ সরল। ফলে কোন প্রকারের যুদ্ধ ব্যাতিরেকে ইসলাম সেই রূপ ঢুকে পড়ল, যে রূপ নিয়ে ইসলামের অস্তিত্বতো দূরের কথা ইসলামকে দেখা পর্যন্ত ইউরোপীয়রা পছন্দ করত না।
ভারত উপমহাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগের যে উপকারিতা পরিদর্শিত হয়েছে তা অন্য কোন স্থান থেকে কম নয়। এই তাবলীগি জামাতের বদৌলতে লোকেরা ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে এসেছেন এবং অনেকে বিভিন্ন শিরক, বিদায়াত ও কুসংস্কার থেকে ফিরেছেন। উপমহাদেশে বার্ষিক যে সকল ইজতেমাগুলো হয় সেগুলোতে লক্ষ লক্ষ জনতার ঢল দেখা যায়। এগুলোর সুন্দর এন্তেজাম দেখে আশ্চর্যবোধ করতে হয়। ইজতেমা শেষে মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য এ সকল লোকেরা বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যথা মিসর, জর্দান, সিরায়া, লেবানন, উত্তর ইয়েমেন এবং উপসাগরীয় দেশসমূহে তাবলীগ জামাতের উপকারিতা স্পষ্ট। অনেক ধর্মবিমুখ ব্যক্তি ধর্মের দিকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, অনেক অবহেলিত গাফেল ব্যক্তি ধর্মের প্রতি তার দিশা ফিরে পেয়েছে। অনেক ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া ব্যক্তি প্রকৃতিভাবে তাওবা করেছে। আমি মনে করি না যেন এটা এসকল দেশের সংস্কারকদের কাছ গোপন থাকবে।
এ হলো তাবলীগ জামাতের ইতিবাচক কয়েকটি দিক। এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে যা আমি তাবলীগ জামাত বিদ্বেষীদের ভাষায় বর্ণনা করছি এবং মানুষের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে বাস্তব সত্য তুলে ধরছি। কারণ আমার উদ্দেশ্য হল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। রাব্বুল আলামীন আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও, অসন্তুষ্ট থাকিও না।
(সংগৃহীত)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!