Monday, February 4, 2019

একজন হানিফ স্বামীর আহলে হাদিস স্ত্রীর সাথে বিতর্কের চিত্তাকর্ষক কাহিনী "বিয়ের প্রথাম দশ রাত" (দ্বিতীয় রাত:)

আম্মাজান: (রাতের খাবারের সময়) বেটা! সকালে কোন কথা লেগে গিয়েছিলে?
সুহাইল: আম্মা! বাদ দেন, আমি নিজেই বুঝিয়ে দিব | আর যদি না বোঝে তাহলে এরপর ......... ! (এতটুকু বলে সুহাইল চুপ হয়ে গেল)
আম্মাজান : না, বেটা! এরপর আর কিছু না৷ এখনতো নতুন নতুন কিছুদিন গেলে পরস্পরে ভালবাসা বেড়ে যাবে৷ তখন একে অপরে মেযাজ বোঝে নিবে ৷
সুহাইল: কামরায় গিয়ে সুহাইল বালিশে হেলান দিতে দিতে বলদ আচ্ছা! আপনার নিকট তো "আকওয়ালে সাহাবা (সাহাৰীগণের বাণী) দলীল নয়, তাই না?
দুলহানা: না, বিলকুল না৷ দেখুন আমাদের উলামায়ে কেরাম পরিস্কারভাবে লিখেছেন:
১. উরফুল জাদীতে আছে- সাহাবীর কওল হুজ্জাত (দলীল) নয় ৷
২, নুযুলুল আবরারে আছে- সাহাবীর ইজতিহাদ্ হুজ্জাত নয় ৷
৩. আত্তজুল মাকালে আছে- সাহাবীর ফেল (কর্মপদ্ধতি) হুজ্জাত নয় অন্যান্য কিতাবেও এমন ফাতওয়া আছে ৷
যেমন: বুদুরুল আহূলা ফাতাওয়ায়ে নযীরিয়া ইত্যাদি ৷
সুহাইল: কিন্তু নবীর কথা মানেন কি না? 
দুলহান: কেন মানব না ৷ নবীজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার উপর জান দিতে প্রস্তুত আছি ৷
সুহাইল: বাহ! কি মজার কথা! আল্লাহ তাআলা আপনার ঈমানকে নিরাপদ রাখুন ৷
নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণীসমূহ নিন :
1. (عليكم بسنتي و سنةالخلفا االراشدين(ترمذي) তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুম্নাহকে আঁকড়ে ধর ৷ (তিরমিযী শরীফ)
2. (فاقتذوابالذين بعدي ابي بكروعمر)(ترمذي তোমরা আমার পরের দু'জন অর্থাৎ আবু বকর ও উমরের অনুসরণ করবে৷
৩. (اصحابي كالنجوم بايهم اقتديتم  اهتديتم) অর্থাৎ আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য, তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়াত পেয়ে যাবে ৷ (মেশকাত শরীফ)
৪.(مااناعليهواصحابي)মুক্তিপ্রাপ্ত ও সফলকাম হল এই জামাআত যারা এর অনুসরণ করবে৷ নৰী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সকল বাণীর উপর মনে প্রাণে উৎসর্গিত হয়ে যান এবং হযরত ইবনে আব্বাস রা, এর তাফসীর গ্রহণ করে নিন ৷ আর 'আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের" বিরুদ্ধে দেয়া ফতওয়া উঠিয়ে নিয়ে নিজেও রাফয়ে ইয়াদাইন ছাড়া নামায পড়ুতে শুরু করুন এবং অন্যদেরকেও তার দাওয়াত দিন৷
দুলহান: আমাদের জ্ঞানের উড্ডয়ন ও বাহার অনেক উর্ধ্ব | (এত সহজে মানার লোক আমরা নই !)
সুহাইল: মানে, হাদীসে রাসূল মানবেন না ৷ 
দুলহান: কেন মানব না? তবে আমরা 'আহলে হাদীস' রাসূলের যে কোন হাদীস মানি না ৷ 
সুহাইল :  ইন্না লিল্লাহি......... | রাসূলের যে কোন হাদীস মানেন না? আয় আল্লাহ! আমি আবার কোন ধরনের আহলে হাদীসের ফাঁদে পড়লাম৷ 
দুলহান: আমরা হলাম "আহলে হাদীস', "আহলে হাদীস'
সুহাইল: কিন্তু আমার তো মত হচ্ছে আপনি 'মুনকিরে হাদীস' | (হাদীস অস্বীকারকারী) ৷ আপনার মাযহাব হবহু শিয়াদের ন্যায় | এ ব্যাপারে পরে কথা হবে | এখন বলুন, আপনি কোন ধরনের হাদীস মানেন?
দুলহান: আমাদের উলামাগণ লিখেছেন যে, আমরা হুযূর সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুধুমাত্র ওই সকল হাদীস মানি যা তিনি ওহীর মাধ্যমে ইরশাদ করেছেন ৷ আর যা তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে বলেছেন, তা আষরা মানি না ৷ 
সুহাইল: স্বীয় স্বরণ শক্তির উপর একটু চাপ দিয়ে স্বরণ করুন, কাল রাতে আপনি কি বলেছিলেন? দুলহান : কী বলেছিলাম?
সুহাইল: কী বলেছিলেন, মনে পড়ে না? আপনি বলেছিলেন "উলামাদেরকে বাদ দেন" এখন আবার কথায় কথায়, "আমাদের উলামাগণ এই বলেছেন"! এটা আবার কেমন অনর্থক কথা? 
দুলহান: অনর্থক কথা নয়; বরং বাস্তব হল, আমরা উলামায়ে কেরাম ব্যতীত এক কদমও চলতে পারব না৷
সুহাইল: মনে হয়, আপনার পূর্বের ভুলের অনুভূতি হয়েছে?
দুলহান: হ্যা, ঠিক ৷ আমার পূর্বের কথার ভিত্তিই ছিল ভুল ৷ এই ভুলের উপর আমার লজ্জা হচ্ছে এবং আমার ভুলের জন্য আমি প্রথমে আল্লাহর নিকট তারপর আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ৷ 
সুহাইল: না, এটা কোন বিষয় নয় ! আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ ভুল প্রমাণিত হলে তা স্বীকার করে নিই তাহলে আমরা অতি দ্রুত এক সরল পথে গিয়ে পৌছব ৷ যা খুব দ্রুত আমাদেরকে গম্তব্যস্থলের নিকটবর্তী করে দিবে ৷ আমরা আমাদের আলোচ্য বিষয়ের দিকে ফিরার পূর্বে আপনি এই ভুলটিও স্বীকার করে নিন যে, আপনি এবং আপনার উলামারা রাসূল সাল্পাল্পাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কোন হাদীসকে মানে না এটা ভুল হওয়ার কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা বলেন : (وماينطق عن الهوي ان هوالاوحي يو حي) মানে আমার হাৰীব ওহী ছাড়া কোন কিছু বলেন-ই না ৷ সুতরাং বোঝা গেল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যেক ইরশাদই মানা চাই ৷ 
দুলহান: আপনার কথাগুলো অত্যন্ত ক্রিয়াশীল এবং দলীল ভিত্তিক ৷ বাহ্যিকভাবে মনে হয় আপনি দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন নি৷ কিন্তু আলোচনা তো আলেমদের চেয়েও বেশী ওজনী ৷ আমাদের সামনে তো কেউ এক মিনিটও কথা বলতে পারে না ৷ আপনিই মাত্র সেই ব্যক্তি যে কাল রাত হতে আমাকে নিরুত্তর করে যাচ্ছেন৷ 
সুহাইল: বেগম! আপনার কথা ঠিক a, আমি নিয়মতান্তিকভাবে কোন দারুল উলূমে লেখা পড়া করিনি, কিন্তু........
দুলহান: কিন্তু কি?
সুহাইল: মানে, আমার এক বন্ধু লোহা ব্যবসায়ী ৷ তার সাথে আমার উঠা বসা হয় ৷ 
দুলহান : কিং সবর্ণাক্ষরে লেখার মত কথাগুলো আপনি একজন লোহা বিক্রেতার নিকট পেয়ে যা?
সোহাইল : জি হ্যাঁ এটা  কোন আশ্চর্যের কথা নয় ৷ হযরত দাউদ আ. আল্লাহ তাআলার রাসূলও ছিলেন আবার লোহা দ্বারা বর্ম বানাতেন ৷ কুরআনে আছে : (والناله الحديد)তাছাড়া সাইয়েদুল আ. নবীও ছিলেন, ব্যবসায়ীও ছিলেন৷
দুলহান: মানে আপনার বন্ধু শুধু লোহা বিক্রেতা নন; বরং আলেমও ৷
সুহাইল: জি কিংবা সরকারের লেখার মত কথা গুলো আপনার জন্যর জন্যআপনারর মতকথামতর হ্যা! বাস্তবেই যদি এরকম আলেমদের নিকট মানুষের আসা-যাওয়া থাকে, তাহলে সে গোমরাহ হবে না৷ আবার ইলম হাসেল করা ছাড়াই তার ইলম হাসেল হতে থাকবে৷ 
দুলহান: আমি কি ...............
সুহাইল: চুপ হয়ে গেলেন কেনঃ কথা পুরা করেন!
দুলহান: আমি কি তার সাথে সাক্ষাত করতে পারি? যেন অন্যান্য প্রশ্নাবলীরও সমাধান করতে পারি?
সুহাইল: আপাতত: আপনার জন্য আমি ও আমার ইলম যথেষ্ট | প্রয়োজন হলে পরে দেখা যাবে ৷
দুলহান: এখন আমার দ্বিতীয় ভুলেরও অনুভূতি হচ্ছে ৷ কুরআনে কারীমের প্রকাশ্য আয়াতের মোকাবেলায় আমাদের 'আহলে হাদীস" উলামারা যা লিখেছে, ভুল লিখেছে ৷ আমি তাদের এই বদ আকীদা ও ভুল ফায়সালা মুক্ত ৷
সুহাইল: খুব ভাল, খুব ভাল ৷ এটা বলে সুহাইল স্রীর কাছে গিয়ে বসল ! ক্রী তার এই মুহাৰ্বত দেখে নিজ বাহু ছড়িয়ে দিল ৷ সুহাইলের মাথা স্রীর কোলে লাগা মাত্রই সে একেবারে উঠে বসে পড়ল ৷
দুলহান: কি হল, সারতাজ! - সুহাইল : হবে আর কিং একটি বিষয় রয়ে গেছে ৷ আর সত্যিকারার্থেই যদি আপনার এই ভুলের অনুভূতি হয়ে যায় তাহলে আপনার ঈমানের ব্যাপারে আমার যে সন্দেহ ছিল তা পরিবর্তন হয়ে যাবে ৷ আর আজকের রাত শান্তিতেই কাটবে ৷
দুলহান: সেটা কি বিষয়? আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন যে, ভুলের অনুভূতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ স্বীয় ভুল স্বীকার করে নিই ৷
সুহাইল: দেখুন! সাহাবায়ে কেরাম রা, হলেন এই উম্মতের পবিত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ৷ তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এক জায়গায় বলছেন (رض الله عنهم ورضوا عنه)| অন্যত্র ইরশাদ করেন :(لقد رضي الله عن المو منين اذيبا يعونك تحت اشجرة)আর তাঁদের সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের চার চারটি বাণীতো মাত্রই শুনতে পেলেন! তাছাড়াও হাদীসের কিতাবসমূহে তাঁদের ব্যাপারে অনেক প্রশংসা বাণী রয়েছে ৷ এতদসত্বেও আপনার উলামাদের তাদের কওল-ফেয়েল (কথা-কর্ম) কে দলীল না মানা শক্ত বে-আদৰী ৷ বরং অত্যন্ত খারাপ আকীদা ৷ অপরদিকে আপনার এক আলেম ওয়াহীদুযযামান (যে বুখারী ইত্যাদির তরজমাও করেছে) "নুযুলুল আবরার" এর টীকায় লেখেন, "এর দ্বারা বোঝা গেল সাহাবাদের মধ্যে যারা ফাসেক ছিল 
যেমন : ওয়ালীদ ইবনে উক্কৃবা, মুজাবিয়া, আমর ইবনে আস, মুগীরা ইবনে শো'বা, সামুরা ইবনে জুনদুব !" আপনার এই ওয়াহীদুজ্জামান ই "লুগাতুল হাদীসে" হযরত আমীরে মুজাবিয়া রা, সম্পর্কে লিখেন যে, "তাঁর সম্বন্ধে সম্মানসূচক শব্দ যেমন : হযরত] বা [রা. ইত্যাদি বলা অত্যন্ত দুঃসাহস ও নিরীকতা ৷" বুখারীর তরজমায় এক জায়গায় লিখেছেন, "আৰু সুফিয়ান আজীবন নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যুদ্ধরত থাকে ৷ তার ছেলে মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান সত্য খলীফা হযরত আলী রা, এর সাথে মোকাবেলা করে ৷ হাজারো মুসলমানের রক্ত ঝরিয়েছে ৷ কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে যে দূর্বলতা এসে গেল তা এই মুআবিয়ার কারণেই হল৷" বিশ্ব সম্রাট-সাহাবাদের প্রতি সম্ভষ্টির ঘোষণা দিলেন ৷ দোজাহানের সরদার তাদের অনুকরণের নির্দেশ দিলেন ৷ তাদেরকে হিদায়াতের তারকা বললেন কিন্তু আপনার আলেমরা তাদেরকে ফাসেক বলেন | এই বে- আদবীর কি কোন সীমা আছে? এমন কি কেউ কেউ তো হযরত উমর রা. কে 'বেদআতী' পর্যন্ত বলেছে ৷ নাউযুবিল্লাহ! সাহাবীগণকে গালমন্দ করা এই কাজ হল শিয়াদের ৷ আর বর্তমানে করছেন আপনারা! আপনাদের বংশপরম্পরা শিয়াদের সাথে মিলে না তো?
দুলহান: জ্বী না! এই বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না ৷ তারা হাদীসের উপর আমল করে" এই দাবীর কারণে আমি তাদেরকে ভালবাসতাম ৷ আমার কি সাহস আছে যে, আমি সাহাবাদের রা. ব্যাপারে এমন ভুল আকীদা পোষণ করব? বরং যারা সাহাবীগণের ব্যাপারে এমন গর্হিত মন্তব্য করেছে আমি তাদেরকে মুসলমানই মনে করি না ৷ তারাই আমাদের দ্বীন ইসলামের সাক্ষী | কোন মামলার সাক্ষীরাই যদি নির্ভরযোগ্য না হয় তাহলে সে মামলাই খারেজ হয়ে যায় ৷ আল্লাহ তাআলা আমাকে সঠিক বুঝ দান করুন ৷
সুহাইল: এখন হবে মজা, আলোচনাও চলতে থাকবে ৷ আর মুহাব্বতও বৃদ্ধি পেতে থাকবে ! 
দুলহান: কিন্তু আপনি আমাকে সব বিষয়ে হারাতে পারবেন না ! সুহাইল : তা আবার কেমন? 
দুলহান: শুনুন! আমি হলাম "আল-হুদা ইন্টারন্যাশনাল" এর ম্যাডামের স্নেহাস্পদ ছাত্রী! সুহাইল: আচ্ছা! কোন অসুবিধা নেই ৷ প্রথমে আপনার আকাঙ্খা পুরা করে নিন ! পরে আপনার ম্যাডামের আশাও পূরা করব! ইনশাআল্লাহ!
দুলহান: আপনি কি আমার ম্যাডামের চেয়ে বড় আলেম?
সুহাইল: না বেগম! আমি তো একজন আনপড় ও মূর্থ ব্যক্তি৷ শুধুমাত্র আহলে ইলমদের ভালবাসার ফল যে, আপনার ম্যাডামের ন্যায় হাজারো ব্যক্তির বুলি বন্ধ করে দিই ৷
দুলহান: দুঃখিত! এখন একটু আরাম করে নিন ৷ গত রাতেও ঘুমাতে পারেননি ৷ আজ বিকালে অফিস হতে ফিরার পর রাফয়ে ইয়াদাইন এর উপর কথা হবে৷


শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!