Sunday, May 5, 2019

যেভাবে ধংস হচ্ছে দেশের যুব সমাজ


১.নৈতিক শিক্ষার অভাব, 
২.বাবা-মায়ের ব্যস্ততা ও উদাসীনতা, 
৩.পাশ্চাত্য ও ইন্ডিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব, 
৪.পর্নগ্রাফী, অশ্লীল সিডি, অশালীন টিভি প্রোগ্রাম, ইন্টারনেট, মোবাইলের সহজলভ্যতা,
৫.নেশার সামগ্রীর সহজলভ্যতা, 
৬.মেয়েদের অশালীন পোশাক ও বেহায়াপনা,
৭.দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান না থাকা ।

১. নৈতিক শিক্ষার অভাব:
পরিবার হলো একটি শিশুর প্রাথমিক পাঠশালা । বর্তমানে পরিবারগুলোতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার খুব অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে । ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে শালীনতা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয় । তাই শিশুরা যে পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তাদের স্ব স্ব ধর্মের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন । যে পরিবারে ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব আছে সেই পরিবারের শিশুরা আদর্শবান ও সুশৃংখল হয়ে গড়ে উঠে । ধর্মবিমুখ পরিবারের শিশুরা হয়ে থাকে বেপরোয়া এবং পরবর্তীতে কোন সামাজিক , নৈতিক অনুশাসন তারা মেনে চলতে চায় না । বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ করা হচ্ছে তাতে নৈতিকতা গঠনের কোন সুযোগ নেই বললেই চলে । ধর্মীয় শিক্ষা বিবর্জিত কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের সেক্যুলার আদর্শে গড়ে তুলে । অপরপক্ষে ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তোলে । মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ , সহমর্মিতা , সমবেদনার শিক্ষা দেয় ধর্ম । বর্তমানে ধর্মহীন শিক্ষার করালগ্রাসে যুব সমাজের চারিত্রিক সৌন্দর্য ভূলুণ্ঠিত হয়ে সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়েছে বন্যপ্রাণীর হিংস্রতা । এই অবস্থা চলতে থাকলে মানুষরূপী পশুতে সমাজ ছেঁয়ে যাবে । যার প্রতিকারের কোন সুযোগই আর অবশিষ্ট থাকবে না ।

২.বাবা-মায়ের ব্যস্ততা ও উদাসীনতা :
আজকাল অনেক পরিবারের বাবা-মাকে তাদের উঠতি বয়সের সন্তানদের ব্যাপারে উদাসীন দেখা যায় । তাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায় , কি করে , কার সাথে মিশে , এসব তারা খবর রাখতে পারছেন না । নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন ও উপার্জনের ক্ষেত্রে তারা এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে , বাচ্চাদের ন্যূনতম সময়টুকুও দিতে পারেন না । এই সুযোগে ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠছে স্বাধীনচেতা । তারা তাদের লাগামহীন জীবনকে উপভোগ করার জন্য হয়ে উঠছে বেপরোয়া । অনেক বাবা-মা নিজেরা শালীনভাবে চললেও সন্তানদেরকে মডার্ন বানানোর নামে কিনে দিচ্ছেন অশালীন ড্রেস । ছেলেমেয়েদের সাথে সুন্দরভাবে মেশা , সঙ্গ দেয়া এবং আদর্শিক কোন শিক্ষা দেবার প্রয়োজনও বোধ করছেন না । ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হচ্ছে । সন্তানরা হয়ে উঠছে বাঁধনহারা । জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে । তারা তাদের জীবনকে উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে নিচ্ছে । জুটিয়ে নিয়ে অসৎসঙ্গ , যারা তাদেরকে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়তে প্রোরোচিত করছে । বিভিন্ন পার্টি বা দিবস উদযাপনের নামের তারা বেহায়াপনা ও উচ্ছৃংখলতায় মেতে উঠছে , গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে অবস্থান করছে , ওদিকে বাবা-মায়েরা থাকছেন সম্পূর্ণ অাঁধারে নিমজ্জিত ।

৩.পাশ্চাত্য ও ইন্ডিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব:
বাংলাদেশে বর্তমানে চর্চা চলছে পাশ্চাত্য ও ইন্ডিয়ান সংস্কৃতির। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে অপসংস্কৃতির বিভীষিকা । বাঙ্গালীয়ানার নামে বিভিন্ন দিবসগুলো উদযাপিত হচ্ছে অত্যন্ত নগ্নভাবে । তথাকথিত আধুনিকতার নামে যুব সমাজ ঝুঁকে পড়ছে বেহায়াপনায় । পরিবারে ও সমাজে ইসলামী অনুশাসন না থাকায় মন-মগজে তারা অপসংস্কৃতিকে অাঁকড়ে ধরছে । উঠতি বয়সের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা তাদের আনন্দের খোরাকে পরিণত হয়েছে । তারা নির্দ্বিধায় ঘোষণা দিচ্ছে , ‘ইভটিজিং ! তার মজাই আলাদা । ‘ রাস্তাঘাটে বখাটেদের উৎপাত অনেকের গা সহা হয়ে গেছে । ভাবখানা এই, ‘এই বয়সের ছেলেপেলেরা একটু-আধটু এমনটি তো করবেই । ‘ সামাজিক অবক্ষয় চূড়ান্তরূপ পরিগ্রহন করেছে । নিজেদের স্বকীয়তা , সংস্কৃতিতে নেমেছে চূড়ান্ত ধস । সকাল-সন্ধ্যা মেয়েদের রাস্তাঘাটে বাজে বাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়া হচ্ছে । নোংরা , অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করা হচ্ছে । এমনকি শারীরিকভাবেও মেয়েদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে । পৌত্তলিক সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ আমাদের সুস্থ সংস্কৃতিকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে । যে সংস্কৃতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে যুব সমাজ নিজেদের নীতি-নৈতিকতা পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছে ।

৪.পর্নগ্রাফী , অশ্লীল সিডি , অশালীন টিভি প্রোগ্রাম , ইন্টারনেট ও মোবাইলের সহজলভ্যতা: 
তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসার জাতির জন্য আশীর্বাদ মনে করা হলেও এর অপব্যবহার যুবসমাজকে বিপথগামী করছে। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে অশ্লীল সিডি, নীল ছবি এখন যুব সমাজের হাতের নাগালে এসে গেছে । ইন্টারনেট ও মোবাইলের সহজলভ্যতা জাতিকে যতটা এগিয়ে দিয়েছে পিছিয়েছেও ভয়ংকর রুপে । বিভিন্ন অশ্লীল নাটক ও সিনেমা যুব সমাজকে হাতে-কলমে অশ্লীতা শিক্ষা দিচ্ছে । উৎসাহিত হয়ে উঠছে ইভটিজিং-এ । অবলীলায় তারা জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক কাজে । জোরপূর্বক যৌন হয়রানির হার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । এইসব উচ্ছৃংখল যুবকদের কাছ থেকে মেয়েদের পরিবারের সদস্যরাও নিরাপদ নয় । প্রতিবাদ করলে হয়তো এসিড মারছে অর্থাৎ শারীরিকভাবে আঘাত করছে অথবা হত্যা করছে । মোবাইলে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে খুব সহজেই তারা পর্ণ চিত্র ডাউনলোড করতে পারছে এবং সেই শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠছে । কোমলমতি মেয়েদেরকে প্রেমের ছলনা দিয়ে আয়ত্বে আনছে ও তাদের অজান্তেই তাদেরকে দিয়ে পর্ণ চিত্র বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে । এইসব অশ্লীল ছবি জাতির ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে ।

৫.নেশার সামগ্রীর সহজলভ্যতা:
একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজন সেই জাতির যুব সমাজকে ধ্বংস করা । এই সুদূর প্রসারি টার্গেট নিয়ে কিছু চিহ্নিত চক্র আমাদের যুব সমাজের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে । নেশার সামগ্রী যুব সমাজের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া হয়েছে । চোরাই পথে নেশার সামগ্রী হরদম আসছে । পিলখানা ট্র্যাজেডির পর থেকে বর্ডার অরক্ষিত থাকায় এর মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে গেছে । নেশাগ্রস্ত যুব সমাজ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে । পথে ঘাটে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করছে। এমনকি জোরপূর্বক তাদের যৌন কামনাকে পূর্ণ করার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠছে । যাচ্ছেতাইভাবে যৌনবাসনা পূর্ণ করাটাই তাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে । ভগ্ন পরিবার ও যেসব পরিবারে বাবা-মায়ের মিল নেই , সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই অধিকহারে নেশাগ্রস্ত হচ্ছে এবং জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রকম অপকর্মে ।
৬.মেয়েদের অশালীন পোশাক:
এই বখে যাওয়া ছেলেদের পাশাপাশি কিছু কিছু মেয়ের অশালীন পোশাকও ইভটিজিং-এ উৎসাহ জোগাচ্ছে । দেহ প্রদর্শনীমূলক অাঁট-সাঁট পোশাক পরে মেয়েরা তাদেরকে যৌন আবেদনময়ী করে তুলে ধরছে । এখন চারিদিকে মেয়েদের চলছে সুন্দরী হিসেবে প্রদর্শন করার মৌন প্রতিযোগিতা । তারা বুঝতেও পারছে না , এতে তাদের সৌন্দর্য্য ও মর্যাদা বাড়ছে না বরং কমছে । ঐসব বাজে পোশাক তাদের নোংরাভাবে বখাটে ছেলেদের আকর্ষণ করছে ও অনুপ্রাণিত করছে অসামাজিক কাজে । বর্তমানে কিছু কিছু মেয়ের পোশাকে এতটাই নগ্নতা এসেছে যে তাতে ছেলেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে প্ররোচিত হচ্ছে ।

৭.দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান না থাকা:
 প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় ইভটিজিং ও যৌন হয়রানিমূলক বিভিন্ন ঘটনা ছাপা হচ্ছে এবং তা দিন দিন মহামারী আকার ধারণ করছে । কিন্তু আইন-শৃংখলা বাহিনী এসব ব্যাপারে যেন অনেকটাই উদাসীন । এমন কি বখাটেদের শায়েস্তা করার জন্য কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না । এতে বখাটেদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে অনেকগুণ । কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহল তাদের প্রভাব খাটিয়ে এসব কুলাঙ্গারদের ছাড়িয়ে নিচ্ছে আদালত থেকে । পরবর্তীতে তারা বিপুল উৎসাহ নিয়ে প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সমস্ত প্রকার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে ।

শেয়ার করুন

0 Comments:

একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!