ইসলামী ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক লোকের প্রমাণ পাওয়া যায়, যারা স্বীয় স্ত্রীর বক্রতাপূর্ণ আচার-ব্যবহারে সহনশীলতা ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় প্রদানের ফলে তারা ওলীদের মর্যদার ভূষিত হয়েছে।
► আল্লাহ্র বন্টনে সন্তুষ্ট থাকাঃ
দু‘সদস্য বিশিষ্ট স্বামী-স্ত্রীর সার্বক্ষণিকের জীবনে মনোমালিন্য, ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ পর্যায়ে স্বামীকে ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে একথাই প্রমাণ করতে হবে যে, আমাকে যে স্ত্রী দেয়া হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে। এটা আল্লাহ তা‘আলার কুদরতী বন্টন। সুতরাং এর উপর আমার সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট হলে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর সন্তুষ্ট হবেন।
► দ্বীনী নসীহত করা / তালীম দেয়াঃ
তাদেরকে নসীহত করতে হবে। তারা আক্বলের দরুণ ভূল-ভ্রান্তি করে বসলে যথা সম্ভব তাকে মাফ করে দিতে হবে। তাদের আচার-আচরণকে যথ সম্ভব বরদাশত করে নিয়ে এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। প্রয়োজনের মুহাব্বাতের সাথে তাদের বুঝাতে হবে, নসীহত করতে হবে, দ্বীনী কিতাবের তা‘লীম দিতে হবে।
► তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল না করাঃ
তাদেরকে মোটেও হেয় নযরে দেখা যাবেনা। তুচ্ছ জ্ঞান করা যাবেনা। যেহেতু তারা বেহেশতের হুরদের চেয়েও অধিক সম্মানী, সৌন্দর্যের অধিকারী এবং সুন্দরী হবে। কেননা স্ত্রীলোকেরা দুনিয়াতে নামায পড়েছে, রোযা পালন করেছে, স্বামীর খিদমত করে তাকে সন্তুষ্ট রেখেছে, পর্দা করেছে। পক্ষান্তরে হুররা সেসব ইবাদত করেনি।
অসংখ্য খিদমদের আঞ্জাম দিচ্ছে, তাদের খিদমতের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। সামান্য চিন্তা করলেই তা বুঝা সম্ভব। তাদের উছিলায় পুরুষ অনেক গুনাহ থেকে বাঁচতে পারছে, সন্তানের চেহারা দেখছে, নিশ্চিন্ত ভাবে দ্বীন-দুনিয়ার দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হচ্ছে ইত্যাদি।
► সবর ও ক্ষমা করাঃ
অপর দিকে বিশেষ হিকমতের কারণে তাদেরকে পুরুষদের তুলনায় কম আকল দেয়া হয়েছে-একারণে তারা অনেক ক্ষেত্রে ভুল করে বসে, এটা ক্ষমা যোগ্য। তাদের জান্নাতী মর্যাদা লক্ষ্য করে তাদের বক্রতাপূর্ণ আচরণ সহ্য করলে শুধু প্রভু তুষ্টি এবং দাম্পত্য জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবেনা বরং সবরের কারণে ইনশাআল্লাহ আল্লাহওয়ালাদের কাতারে শামিল হওয়া যাবে।
► একটি শিক্ষণীয় ঘটনাঃ
হযরত শাহ আবুল হাসান খারকানীর (রহ.) স্ত্রী বড়ই বদ মেযাজী ছিল। শাহ সাহেবের নিকট জনৈক খোরাসানী ব্যক্তি বাই‘আতের জন্য তার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-হযরত কোথায় আছেন?
অন্দর মহল হতে বিবি সাহেবা উত্তরে বললেন-কিসের হযরত? আমি রাত-দিন তার নিকটই আছি। তার মধ্যে বুযুর্গীর কি আছে?
এ উত্তর শুনে খোরাসানী বেচারা কাঁদতে লাগল। প্রতিবেশীদের সাথে আফসোস প্রকাশার্তে বলল-হাজার মাইল দুরত্ব পাড়ি দিয়ে আসলাম বাই‘আতের জন্য। আর বিবি সাহেবা বলছেন, তিনি বুযুর্গই নন।
লোকেরা তার কথা শুনে বলল, বিবি সাহেবার কথায় কর্ণপাত করো না। বরং তুমি ময়দানে যাও এবং তার আমল-আখলাক ও কারামত স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করো।
অতপর সে ব্যক্তি মাঠে গিয়ে শাহ সাহেবকে বাঘের পিঠে আরোহী অবস্থায় আসতে দেখলো।
এদিকে শাহ সাহেব ব্যাপারটি আঁচ করতে পারলেন যে, এ খোরাসানী ঘর থেকে আমার স্ত্রীর কটুক্তি শুনে এসেছে। তাই বুযুর্গ তাকে সম্বোধন করে বললেন- এ বদমেযাজ স্ত্রীর বদমেযাজ ও তিক্ততা আমি সহ্য করছি যার ফলশ্রুতিতে এ হিংস্র বাঘ আমার গোলামী খাটছে। আল্লাহ তা‘আলা এ স্ত্রীর বদৌলতে আমাকে এ নে‘আমত প্রদান করেছেন। আমি বিবিকে আল্লাহর বান্দী মনে করে আল্লাহ তা‘আলার বন্টনে খুশি হয়ে কালাতিপাত করছি। আমি যদি তাকে তালাক প্রদান করি তাহলে সে আমার অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট দিবে। এজন্য তাকে আল্লাহর বান্দী ধারণাপূর্বক আল্লাহর বন্টনে খুশি হয়ে কার্য সম্পাদন করি। আমি তাকে স্ত্রীর চেয়ে আল্লাহর বান্দী এবং তারই কুদরতী বন্টন হিসাবে প্রাধান্য দান পূর্বক তার সাথে সৌজন্যে মূলক আচরণ করি। তার তিক্ত ব্যবহারকে খুশি মনে করে বরদশ্ত করি।
অতপর শাহ আবুল হাসান খারকানী (রহ.) আল্লামা রুমীর (রহ.) একটি কবিতা আবৃত্তি করেন, যার অর্থঃ
“আমার ধৈর্য্য যদি এ মহিলার কষ্ট-যাতনাকে সহ্য না করত, তাহলে এ হিংস্র বাঘ কি আমার বেগার খাটতো যে, আমি তার পিঠে বসে আছি? আবার ওর পিঠে লাকড়ির বোঝা চাপিয়েছি? এসব কারামত আল্লাহ তা‘আলা এ মহিলার তিক্ত স্বভাবের সহ্য করার কারণেই দিয়েছেন।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!