১. মসজিদে ঘুমানোর হুকুম কী?
২. নফল ইতিকাফের সর্বনিম্ন পরিমাণ কতটুকু?
নফল ই‘তিকাফের জন্য কি রোজা রাখা শর্ত?
৩. মসজিদে বাতকর্ম (বায়ু ত্যাগ) করার বিধান কী?
(১) মসজিদে ঘুমানো সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস-
ইমাম বুখারী রহ. (মৃ.২৫৬ হি.) সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায় রেখেছেন, ﺑﺎﺏ ﻧَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ‘মহিলাদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয’। এ অধ্যায়ে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ “ ﺃَﻥَّ ﻭَﻟِﻴﺪَﺓً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺳَﻮْﺩَﺍﺀَ ﻟِﺤَﻲٍّ ﻣِﻦْ … ﻓَﺠَﺎﺀَﺕْ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺄَﺳْﻠَﻤَﺖْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻟَﻬَﺎ ﺧِﺒَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺃَﻭْ ﺣِﻔْﺶٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺄْﺗِﻴﻨِﻲ ﻓَﺘَﺤَﺪَّﺙُ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﻼَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﻣَﺠْﻠِﺴًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻮِﺷَﺎﺡِ ﻣِﻦْ ﺗﻌَﺎﺟِﻴﺐِ ﺭَﺑِّﻨَﺎ … ﺃَﻻَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻣِﻦْ ﺑَﻠْﺪَﺓِ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﺃَﻧْﺠَﺎﻧِﻲ
একটি বাঁদীর ঘটনা। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আয়শা রা.। তিনি বলেন মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। সহীহ বুখারী হা. নং ৪৩৯
এ হাদীসে ব্যাখ্যায় ‘হানাফী’ ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা আইনী রহ. বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺑﻄﺎﻝ ﻓﻴﻪ ﺃﻥ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﻣﺴﻜﻦ ﻭﻻ ﻣﻜﺎﻥ ﻣﺒﻴﺖ ﻳﺒﺎﺡ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﻭ ﺍﻣﺮﺃﺓ
ইবনে বত্তাল রহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জয়েয। (উমদাতুল কারী, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)
অতঃপর ইমাম বুখারী আরেকটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন, ﺑَﺎﺏ ﻧَﻮْﻡِ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ অর্থাৎ ‘পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয’। এ অধ্যায়ে দলিল হিসেবে তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১. সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন,
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ” ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﺎﺏٌّ ﺃَﻋْﺰَﺏُ ﻟَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ . ﻭﻟﻔﻆ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ - ﻛﻨﺎ ﻭﻧﺤﻦ ﺷﺒﺎﺏ ﻧﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻧﻘﻴﻞ . ﻭﻫﻜﺬﺍ ﻟﻔﻆ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ .
তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী,) জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবীশাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন,
ﻭﻫﻮ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻟﻐﻴﺮ ﺍﻟﻐﺮﻳﺐ …
এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়। (উমদাতুল কারী)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ.৮৫২ হি.) বলেন,
ﻗﻮﻟﻪ “ : ﺑﺎﺏ ﻧﻮﻡ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ” ﺃﻱ ﺟﻮﺍﺯ ﺫﻟﻚ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ،
অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। (ফাতহুল বারী)
২. হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন,
” ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑَﻴْﺖَ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻳْﻦَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﻤِّﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻴْﻨِﻲ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﻓَﻐَﺎﺿَﺒَﻨِﻲ ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻘِﻞْ ﻋِﻨْﺪِﻱ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟِﺈِﻧْﺴَﺎﻥٍ : ﺍﻧْﻈُﺮْ ﺃَﻳْﻦَ ﻫُﻮَ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺭَﺍﻗِﺪٌ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﻀْﻄَﺠِﻊٌ ﻗَﺪْ ﺳَﻘَﻂَ ﺭِﺩَﺍﺅُﻩُ ﻋَﻦْ ﺷِﻘِّﻪِ ﻭَﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﺗُﺮَﺍﺏٌ، ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻤْﺴَﺤُﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻗُﻢْ ﺃَﺑَﺎ ﺗُﺮَﺍﺏٍ، ﻗُﻢْ ﺃَﺑَﺎ ﺗُﺮَﺍﺏٍ .
একদিন রাসূলুল্লাহ সা. হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি। জিজ্ঞেস করলেন, আলী কোথায়? ফাতেমা বললেন, আমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেন, তাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানাল, আলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারী)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন,
ﻓﻴﻪ ﺇﺑﺎﺣﺔ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻟﻐﻴﺮ ﺍﻟﻔﻘﺮﺍﺀ ﻭﻟﻐﻴﺮ ﺍﻟﻐﺮﻳﺐ ﻭﻛﺬﺍ ﺍﻟﻘﻴﻠﻮﻟﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺈﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﻟﻢ ﻳﻘﻞ ﻋﻨﺪ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ ﻭﻧﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻷﺑﻲ ﻧﻌﻴﻢ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺑﺸﺮ ﺑﻦ ﺟﺒﻠﺔ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ ﺑﻦ ﻣﻄﻌﻢ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻳﺮﻓﻌﻪ ﻻ ﺗﻤﻨﻌﻮﺍ ﺍﻟﻘﺎﺋﻠﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻣﻘﻴﻤﺎ ﻭﻻ ﺿﻴﻔﺎ .
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভীনদেশী মুসাফির ছাড়া স্থানীয়দের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েয। কারণ (জায়েয বলেই) হযরত আলী (রা.) ফাতেমা রা. এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমালেন। ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী রহ. ‘কিতাবুল মাসাজিদে’ হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, মেহমান বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। (উমদাতুল কারী)
৩. তৃতীয় বর্ণনায় আহলে ছুফফার বিবরণ তুলে ধরেছেন। তাঁরা মসজিদে নববীতেই রাত দিন থাকতেন। এ অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে রজব রহ. (মৃ.৭৯৫ হি.) বলেন,
ﻭﻟﻴﺲ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺇﻻ ﻧﻮﻣﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻻ ﺷﻚ ﻓﻲ ﺃﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ، ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻬﻢ ﻣﺄﻭﻯ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﺼﻔﺔ ،
এখানে এ হাদীস বর্ণনা করার উদ্দেশ্য আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোর কথা তুলে ধরা। সন্দেহ নেই আহলে ছুফফা মসজিদেই ঘুমাতেন। রাত দিনে তাদের ঘুমানোর আর কোন স্থান ছিল না।
ইবনে সা‘দ রহ. (মৃ.২৩০ হি.) বর্ণনা করেন,
ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻗﺴﻴﻂ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻧﺎﺳﺎ ﻓﻘﺮﺍﺀ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻣﻨﺎﺯﻝ ﻟﻬﻢ ، ﻓﻜﺎﻧﻮﺍ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻳﻈﻠﻮﻥ ﻓﻴﻪ ، ﻣﺎ ﻟﻬﻢ ﻣﺄﻭﻯ ﻏﻴﺮﻩ ، .. ﺫﻛﺮﻩ ﺍﺑﻦ ﺭﺟﺐ ﻓﻰ ﻓﺘﺢ ﺍﻟﺒﺎﺭﻯ ﻟﻪ
আহলে ছুফফা ছিলেন রাসূলের একদল দরিদ্র সাহাবী। তাদের কোন বাড়ি ঘর ছিল না। তাঁরা মসজিদেই ঘুমাতেন, মসজিদেই থাকতেন। এছাড়া তাদের আর কোন আশ্রয় ছিল না। (তাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাদ, ফাতহুল বারী, ইবনে রাজব)
এ সংক্রান্ত আরো কয়েকটি হাদীস
৪. সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন,
” ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣُﺴْﺘَﻠْﻘِﻴًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻭَﺍﺿِﻌًﺎ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ
আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। (সহীহ বুখারী)
৫. হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
ﺃَﻥَّ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ ﺍﻟْﻐِﻔَﺎﺭِﻱَّ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺨْﺪُﻡُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﺧِﺪْﻣَﺘِﻪِ، ﺁﻭَﻯ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻫُﻮَ ﺑَﻴْﺘُﻪُ، ﻳَﻀْﻄَﺠِﻊُ ﻓِﻴﻪِ، ﻓَﺪَﺧَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ ﻧَﺎﺋِﻤًﺎ ﻣُﻨْﺠَﺪِﻟًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﻓَﻨَﻜَﺘَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺑِﺮِﺟْﻠِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﺟَﺎﻟِﺴًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ”: ﺃَﻟَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﻧَﺎﺋِﻤًﺎ؟ “ ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺫَﺭٍّ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻓَﺄَﻳْﻦَ ﺃَﻧَﺎﻡُ، ﻫَﻞْ ﻟِﻲ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﺖٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ؟، . ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ : ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻭﺭﻭﻯ ﺑﻌﻀﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﺷﻬﺮ ﺑﻦ ﺣﻮﺷﺐ ﻭﻓﻴﻪ ﻛﻼﻡ ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻖ
হযরত আবুযর রা. রাসূলুল্লাহ সা. -এর খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন, আবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেন? আবুযর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ?! এ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হা.২৬৯২৮ মাজমাউয যাওয়াইদ হা. ২০২৩)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﺪﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻍ ﻣﻦ ﺧﺪﻣﺘﻪ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺎﺿﻄﺠﻊ ﻓﻴﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻷﻭﺳﻂ ﻭﻓﻴﻪ ﺷﻬﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﻛﻼﻡ ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻖ
তিনি রাসূলুল্লাহ সা. -এর খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেন, মসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী। মাজমাউয যাওয়াইদ হা. ২০২৪)
মোট কথা হযরত আবু যর রা. এর থাকার মত কোন ঘরই ছিল না। তিনি সব সময়ই মসজিদে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিনই তাঁকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি।
খলীফা হযরত উমর ও হযরত উসমান রা.
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন,
” ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣُﺴْﺘَﻠْﻘِﻴًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻭَﺍﺿِﻌًﺎ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ ” ﻭَﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺷِﻬَﺎﺏٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺴَﻴِّﺐِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻋُﻤَﺮُ ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﻳَﻔْﻌَﻠَﺎﻥِ ﺫَﻟِﻚَ .
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, হযরত উমর ও উসমান রা. ও এভাবে মসজিদে ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী)
হযরত হাসান বছরী (মৃত. ১১০ হি.) রা. বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﻧﺎﺋﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻟﻴﺲ ﺣﻮﻟﻪ ﺃﺣﺪ ﻭﻫﻮ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﻭﻗﺪ ﻧﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ …
আমি হযরত উসমান রা. কে দেখেছি মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর পাশে কেউ নেই। অথচ তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন। হযরত হাসান আরো বলেন, সাহাবা তাবেয়ীদের অনেকেই মসজিদে ঘুমাতেন। (তাবারী, উমদাতুল কারী)
এ বিষয়ে মহান তাবেয়ীদের কয়েকজনের মতামত তুলে ধরছি
۱ . ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻗﺎﻝ ﺳﺄﻟﺖ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﻛﻴﻒ ﺗﺴﺄﻟﻮﻥ ﻋﻦ ﻫﺬﺍ ﻭﻗﺪ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻴﻪ
১.হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)
٢ . ﻋﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ ﺑﻦ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﻳﻨﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ
২.হযরত ইউনুস রহ. বলেন, আমি তাবেয়ী ইবনে সীরীনকে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা )
٣ . ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﺴﺠﺪ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻨﺎﻡ ﻓﻴﻪ
৩.বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ. এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেন, ঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৩)
٤ . ﻋﻦ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺞ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻟﻌﻄﺎﺀ ﺃﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻗﺎﻝ ﺑﻞ ﺃﺣﺒﻪ
৪.ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি হযরত আতা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপছন্দ করেন? বললেন, না, বরং মসজিদে ঘুমানোকে আমি পছন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৭)
٥ . ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺴﻴﺐ ﺇﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻳﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻳﻌﻨﻲ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻓﻴﻪ
৫.হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস করা হল, মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কী? তিনি উত্তরে বললেন, আহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন তাহলে? অর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট) (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২২)
٦ . ﻋﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻧﺠﻴﺢ ﻗﺎﻝ ﻧﻤﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻓﺎﺣﺘﻠﻤﺖ ﻓﻴﻪ ﻓﺴﺄﻟﺖ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺫﻫﺐ ﻭﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻌﻨﻲ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻬﻪ
৬.হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন , আমি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম, কি করব? বলেন, গোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২৩ )
۷ . ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺩﻳﻨﺎﺭ : ﻛﻨﺎ ﻧﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ .
৭.হযরত আমর ইবনে দীনার বলেন, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এর খিলাফত কালে আমরা মসজিদেই রাত যাপন করতাম। (ফাতহুল বারী, ইবনে রজব।)
সার কথা
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আবুযর গিফারী রা. ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ, আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ রহ. বলেছেন, নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, ই‘লামুস্-সাজিদ বিআহ্কামিল মাসাজিদ, মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃ.৭৯৪ হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭)
হানাফী মাযহাব
বদরুদ্দীন আইনী রহ. (মৃ. ৮৫৫ হি.) হানাফী মাযহাবের একজন উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহ। মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়া সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তথাপি হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আলফাতাওয়াল হিন্দিয়া’য় (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী) উদ্ধৃত হয়েছে,
ﻭَﻟَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﻟِﻠْﻐَﺮِﻳﺐِ ﻭَﻟِﺼَﺎﺣِﺐِ ﺍﻟﺪَّﺍﺭِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨَﺎﻡَ ﻓﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻓﻲ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ ﻣﻦ ﺍﻟْﻤَﺬْﻫَﺐِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺣْﺴَﻦُ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻮَﺭَّﻉَ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻛَﺬَﺍ ﻓﻲ ﺧِﺰَﺍﻧَﺔِ ﺍﻟْﻔَﺘَﺎﻭَﻯ
বিশুদ্ধ মত অনুসারে মুসাফির ও স্থানীয় উভয়ের জন্যই মসজিদে ঘুমানো জায়েয। তবে উত্তম হল (অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া) না ঘুমানো। খিযানাতুল ফাতাওয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
তবে অপ্রয়োজনে ঘুমানো উচিত নয় উল্লেখ করে অনত্র বলেন,
ﻭَﻳُﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟﻨَّﻮْﻡُ ﻭَﺍﻟْﺄَﻛْﻞُ ﻓﻴﻪ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﻜِﻒِ ﻭﺇﺫﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﻌَﻞَ ﺫﻟﻚ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻮِﻱَ ﺍﻟِﺎﻋْﺘِﻜَﺎﻑَ ﻓَﻴَﺪْﺧُﻞَ ﻓﻴﻪ ﻭَﻳَﺬْﻛُﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺑِﻘَﺪْﺭِ ﻣﺎ ﻧَﻮَﻯ ﺃﻭ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﺛُﻢَّ ﻳَﻔْﻌَﻞَ ﻣﺎ ﺷَﺎﺀَ ﻛَﺬَﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺴِّﺮَﺍﺟِﻴَّﺔِ
ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়া মসজিদে ঘুমানো ও খাওয়া-দাওয়া করা মাকরূহ (তবে এটি মাকরূহে তাহরীমী তথা হারাম নয়; বরং মাকরূহে তান্যীহী অর্থাৎ অপসন্দনীয় ও অনুচিত কাজ)। তাই যদি কেউ মসজিদে ঘুমাতে চায়, তাহলে তার উচিৎ ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইচ্ছানুসারে আল্লাহর যিকর অথবা নামায পড়ে নেবে। তার পর যা ইচ্ছা করবে। সিরাজিয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
ইমাম আলাউদ্দীন হাছ্কাফী রহ. (মৃ. ১০৮৮ হি.) এর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইবনে আবীদীন শামী রহ. (মৃ.১২৬০ হি.) তাঁর বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ “ফতুয়ায়ে শামীতে” লেখেন,
ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ : ﻟﻜﻦ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻛﻤﺎﻝ ﻻ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻷﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺮﺏ ﻭﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻴﻪ ﻣﻄﻠﻘﺎ ﻭﻧﺤﻮﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺠﺘﺒﻰ . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ ﻓﻰ ﺷﺮﺣﻪ : ( ﻗﻮﻟﻪ ﻟﻜﻦ ﺇﻟﺦ ) ﺍﺳﺘﺪﺭﺍﻙ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻷﺷﺒﺎﻩ ﻭﻋﺒﺎﺭﺓ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻜﻤﺎﻝ ﻋﻦ ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻹﺳﺒﻴﺠﺎﺑﻲ ﻟﻐﻴﺮ ﺍﻟﻤﻌﺘﻜﻒ ﺃﻥ ﻳﻨﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻣﻘﻴﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺃﻭ ﻏﺮﻳﺒﺎ ﺃﻭ ﻣﻀﻄﺠﻌﺎ ﺃﻭ ﻣﺘﻜﺌﺎ ﺭﺟﻼﻩ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺃﻭ ﺇﻟﻰ ﻏﻴﺮﻫﺎ ﻓﺎﻟﻤﻌﺘﻜﻒ ﺃﻭﻟﻰ ﺍ ﻫـ ﻭﻧﻘﻠﻪ ﺃﻳﻀﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﺍﺝ ﻭﺑﻪ ﻳﻌﻠﻢ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻹﻃﻼﻕ . ﻗﺎﻝ ﻁ : ﻟﻜﻦ ﻗﻮﻟﻪ ﺭﺟﻼﻩ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻏﻴﺮﻣﺴﻠﻢ ﻟﻤﺎ ﻧﺼﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺮﺍﻫﺔ ﻭﻣﻔﺎﺩ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﺸﺎﺭﺡ ﺗﺮﺟﻴﺢ ﻫﺬﺍ ﺍﻻﺳﺘﺪﺭﺍﻙ . ﻭﺍﻟﻈﺎﻫﺮ ﺃﻥ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﺍﻷﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺮﺏ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺸﻐﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻟﻢ ﻳﻠﻮﺛﻪ ﻷﻥ ﺗﻨﻈﻴﻔﻪ ﻭﺍﺟﺐ ﻛﻤﺎ ﻣﺮ .
ইবনু কামাল পাশা রহ.‘জামে ইস্বীজানীর’ উদ্ধৃতিতে বলেন, ই‘তিকাফকারী ছাড়া অন্যদের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। ব্যক্তি স্থানীয় হোক বা মুসাফির। চিৎ হয়ে ঘুমাক কিংবা কিবলার দিকে বা যে কোন দিকে পা দিয়ে। সুতরাং ই‘তিকাফকারীর জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। শামী রহ. বলেন, মি‘রাজুদদিরায়া কিতাবেও তা উদ্ধৃত করেছেন। … তবে তাঁর বক্তব্যে কিবলার দিকে পা দেওয়া জায়েয হওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। বরং তা মাকরূহ। শামী রহ. বলেন, মসজিদে ঘুম খাবার-দাবার জায়েয বটে; কিন্তু তা যেন মসজিদকে অপবিত্র না করে। কারণ মসজিদ পবিত্র রাখা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার, ফাতাওয়ায়ে শামী)
সুতরাং মসজিদে ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়াই ঘুমানো জায়েয। তবে ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল। তবে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক।
উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায়,
১.যার থাকার যায়গা নেই, যে মুসাফির বা পথিক (এখানে মুসাফির বলতে বাড়ি থেকে দূরে যে কোন লোককেই বুঝানো হয়েছে। ফিকহ শাস্ত্রের পরিভাষার মুসাফির উদ্দেশ্য নয়)
২.যে ইবাদত বন্দেগী তথা নেক কাজ করার জন্য মসজিদে থাকতে চায়,
৩.যে ইতিকাফের নিয়ত করেছে,
৪.যে দীনী ইলম, জ্ঞান শিখতে বা শিখাতে চায় তাদের সকলের জন্যত মসজিদে থাকা অবশ্যই জায়েয। ৫.বরং এসকল উদ্দেশ্য ছাড়াও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ইতিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল।
বলা বাহুল্য যে,
১.তাবলীগ জামাতের লোকেরা সাধারণত মুসাফিরই হয়ে থাকে। অন্তত বাড়ী থেকে এত দূরে যায় যেখান থেকে বাড়ীতে এসে ঘুমাতে হলে তাঁর দাওয়াতের কাজ, তাঁর দীন শিক্ষা করা বা দীন শিক্ষা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হবে।
২.তা ছাড়া তাবলীগে গমনের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হল, (ফাজায়েলে আমল ইত্যাদি) তালীমের মাধ্যমে, মোজাকারা (পরষ্পরে আলোচনা) ও মোশাওয়ারার মাধ্যমে নিজে দীন শিক্ষা করা, অন্য নতুন সাথীদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া এবং এলাকার মুসলমান ভাইদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া ও তাদেরকে মসজিদমুখী করা।
৩.তাছাড়া তাবলীগে গমনের আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য হল, মানুষ আপন বাড়িতে নিজ পরিবেশে থেকে গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের গুনাহের অভ্যাস ছাড়িয়ে নেক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার জন্যই বছরে এবং মাসে কিছু দিন আল্লাহর ঘরে নেক কাজের উদ্দেশ্যে থাকা। ৪. লোকেরা যখন তাবলীগের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন মারকাজ থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে কঠুরতার সাথে। তাদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত যিম্মাদারকে তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব থাকে। তখন তাদের বলা হয়, সব সময় নফল ইতিকাফের নিয়ত করে রাকতে। এবং মসজিদের সকল আদব রক্ষা করে চলতে।
সুতরাং উপরে উল্লেখিত চারটি কোন একটি শর্ত না থাকলেও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। কোন একটি শর্ত পাওয়া গেলেতো অবশ্যই যায়েজ। আর যদি চারটি শর্তই থাকে তাহলে তাদের মসজিদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে সাহস কার আছে বলেন!
বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হুকুম করেছেন, “ তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারী তথা, নামাযীদের জন্য পবিত্র করে রাখ” (সূরা বাকারা আয়াত, ১২৫)
এখানে আল্লাহ তাআলা ইতিকাফকারীদের জন্য তাঁর ঘরকে সাজিয়ে রাখতে বলেছেন। সুতরাং কেউ যদি মসজিদে থাকার সময় ইতিকাফের নিয়ত করে তাহলে কার সাধ্য আছে আল্লাহর মেহমানকে আল্লাহর ঘরে থাকতে বাধা দেয়ার!
আসলে আমাদের সমাজের সাধারণ মুসলমানরা না জানার কারণে বা কিছু মুর্খ, স্বার্থান্বেশী, দাওয়াতজীবী ও ওয়াজজীবী, দাওয়াত খাওয়া ও ওয়াজেব্যবসা করাই যাদের পেশা, এমন লোকদের কথায় কথায় কত বড় অন্যায় করে আসছে! এটাত আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতা! আল্লাহর দুশমনি! হায়, কে বুঝাবে তাদের। এরা বুঝতেও রাজি না। আল্লাহ, এরাতো আমাদেরই জ্ঞাতি ভাই। এদের তুমি সঠিক জ্ঞান দান কর। আমাদেকে এবং তাদেরকে সকলকে ক্ষমা করে দাও।
(২) ই‘তিকাফের সময় ও এর জন্য রোজা
কেউ কেউ বলে থাকেন, ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। তাবলীগীরা যেহেতু রোজা রাখেনা, তাই তাদের ইতিকাফের নিয়ত করলেও তা ধর্তব্য হবে না!
কিন্তু তাদের এ বক্তব্য নিতান্তই অবান্তর। কারণ ই‘তিকাফ তিন প্রকার। ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল। প্রথম দুই প্রকার ই‘তিকাফের জন্য (ইমাম আবুহানীফা, আবু ইউসূফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতানুসারে) রোজা রাখা শর্ত। (দ্র. আহকামুল কুরআন, জাছ্ছাছ) কিন্তু নফল ই‘তিকাফের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই। যে কোন মুহুর্তে হয়। এবং এর জন্য রোজা রাখাও শর্ত নয়।
ইবনে আবীদীন শামী রহ. বলেন,
( ﻭﺃﻗﻠﻪ ﻧﻔﻼ ﺳﺎﻋﺔ ) ﻣﻦ ﻟﻴﻞ ﺃﻭ ﻧﻬﺎﺭ ﻋﻨﺪ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻫﻮ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻋﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻟﺒﻨﺎﺀ ﺍﻟﻨﻔﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﺎﻣﺤﺔ ﻭﺑﻪ ﻳﻔﺘﻰ
ইমাম মুহম্মদ রহ. এর মতে নফল ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন পরিমাণ এক মূহুর্ত। ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতও এটিই। তাঁর থেকে এ মতটি ‘জাহেরী রেওয়াতের’ আলোকে অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য ও সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। এমতের উপরই ফতোয়া দেওয়া হয়। (রদ্দুল মুহ্তার, ফাতওয়ায়ে শামী)
ই‘তিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত কি না, এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে দুই ধরণের বর্ণনাই রয়েছে। তবে এর মধ্যে ‘জাহেরে রেওয়ায়াত’ হল, নফল ই‘তিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরী নয়। কারণ নফল ই‘তিকাফ এক মহুর্তের জন্যও হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ফকীহ ইবনে নুজাইম রহ. বলেন,
( ﻗﻮﻟﻪ : ﻭﺃﻗﻠﻪ ﻧﻔﻼﺳﺎﻋﺔ ) ﻟﻘﻮﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﻓﻲ ﺍﻷﺻﻞ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺑﻨﻴﺔ ﺍﻻﻋﺘﻜﺎﻑ ﻓﻬﻮ ﻣﻌﺘﻜﻒ ﻣﺎ ﺃﻗﺎﻡ ﺗﺎﺭﻙ ﻟﻪ ﺇﺫﺍ ﺧﺮﺝ ﻓﻜﺎﻥ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻭﺍﺳﺘﻨﺒﻂ ﺍﻟﻤﺸﺎﻳﺦ ﻣﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﺷﺮﻃﻪ ﻋﻠﻰ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ؛ ﻷﻥ ﻣﺒﻨﻰ ﺍﻟﻨﻔﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﺎﻣﺤﺔ ﺣﺘﻰ ﺟﺎﺯﺕ ﺻﻼﺗﻪ ﻗﺎﻋﺪﺍ ، ﺃﻭ ﺭﺍﻛﺒﺎ ﻣﻊ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺮﻛﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨﺰﻭﻝ ﻭﻻ ﻳﺨﻔﻰ ﺃﻥ ﻣﺎ ﺍﺩﻋﺎﻩ ﺃﻣﺮ ﻋﻘﻠﻲ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺑﻬﺬﺍ ﻻ ﻳﻨﺪﻓﻊ ﻣﺎ ﺻﺮﺡ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﺸﺎﻳﺦ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﺷﺮﻃﻪ ﻭﻣﻤﻦ ﺻﺮﺡ ﺑﻪ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻤﺒﺴﻮﻁ ﻭﺷﺮﺡ ﺍﻟﻄﺤﺎﻭﻱ ﻭﻓﺘﺎﻭﻯ ﻗﺎﺿﻲ ﺧﺎﻥ ﻭﺍﻟﺬﺧﻴﺮﺓ ﻭﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻈﻬﻴﺮﻳﺔ ﻭﺍﻟﻜﺎﻓﻲ ﻟﻠﻤﺼﻨﻒ ﻭﺍﻟﺒﺪﺍﺋﻊ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ ﻭﻏﺎﻳﺔ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ﻭﺍﻟﺘﺒﻴﻴﻦ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻭﺍﻟﻜﻞ ﻣﺼﺮﺣﻮﻥ ﺑﺄﻥ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﺷﺮﻃﻪ
অর্থাৎ ই‘তিকাফ সম্পর্কে ‘জাহেরে রেওয়ায়াতের’ আলোকে দুটি বিষয় প্রমাণিত:
১. (নফল) ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন পরিমাণ এক মূহুর্ত
২. রোযা রাখা (নফল) ই‘তিকাফের জন্য শর্ত নয়। ফুকাহা-মাশায়েখ স্পষ্ট ভাষায় একথা উল্লেখ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের ১.আলমাবসূত, ২.শরহু মুখতাছারুত্তাহাবী, ৩.ফাতওয়ায়ে কাযী খান, ৪.যাখীরা, ৫.ফাতাওয়ায়ে জহীরিয়া, ৬.আল কাফী, ৭.বাদাইউছ ছানায়ে, ৮.আননিহায়া, ৯.গায়াতুল বয়ান, ১০.তাব্য়ীন ইত্যাদি কিতাবে একথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। (আল-বাহরুর রায়েক, আরো দ্রষ্টব্য, ফাতহুল কাদীর, রাদ্দুল মুহ্তার (ফাতাওয়ায়ে শামী), আলমুহীতুল বুরহানী ইত্যাদি)
এটিই হানাফী মাযহাবে গ্রহণযোগ্য মত। ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর সপক্ষে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন,
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻳﻮﺳﻒ ﻋﻦ ﻟﻴﺚ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻴﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻋﻦ ﻣﻘﺴﻢ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻮﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﺘﻜﻒ ﺻﻮﻡ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻮﺟﺒﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ - ﺍﻟﻤﺒﺴﻮﻁ ﻟﻤﺤﻤﺪ .
হযরত আলী রা. বলেন, ই‘তিকাফকারীর জন্য রোজা রাখা জরুরী নয়। তবে সে যদি নিজের উপর (মান্নতের মাধ্যমে) রোজা ওয়াজিব করে তাহলে ভিন্ন কথা। (কিতাবুল আছল, মাবসূতে মুহাম্মদ)
সুতরাং দ্বীনি প্রয়োজনে বা কোন ভাল উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকতে হলে নফল ই‘তিকাফের নিয়ত করে নিতে কোন সমস্যা নেই। এতে মসজিদে ঘুমানো জায়েযত হবেই, উপরন্তু তার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবটাই ইবাদতে গণ্য হবে। হাঁ, মসজিদে অবস্থানকারীদের জন্য মসজিদের আদবের প্রতি যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারা জানা না থাকার কারণে বা ভুলে আদবের খেলাফ কিছু হয়ে গেলে, যে জানে তার দায়িত্ব হল তাকে জানিয়ে দেয়া।
এজন্যই তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে যখন কোন জামাতকে কোন মসজিদে পাঠানো হয়, তখন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে হেদায়েতের কথায় আদব সমূহ বলে দেওয়া হয়।
সুতরাং বুঝা গেল, তাবলীগের সাথীদের মসজিদে থাকা ও ঘুমানো এটি কোন দোষনীয় বিষয় নয়। রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন আমল বর্ণিত হয়েছে। তাই এটিকে খারাপ বলার কোন সুযোগ নেই।
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!