এক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণের আলোকে শক্তিশালী মত হল, এ ব্যক্তি ফজরের সুন্নত সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে। ফরযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করবে না। হাদীস শরীফে এসেছে:
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারেনি সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৩
দুই. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তিনি সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নিতেন।
যেমন বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননি, তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৫
তিন. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৩
এ হাদীসে ব্যাপকভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে ফজরের সুন্নতও শামিল। এ থেকে ফজরের সুন্নতকে বাদ দেয়ার সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস নেই। ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন, সাহাবা ও তাদের পরবর্তী অধিকাংশ ফকীহের মত হল,তারা ফজর ও আসরের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফরযের কাযা ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন।
তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের আমল ও নির্দেশনা এবং ঐ সময়ে সুন্নত নফল আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার হাদীস এবং সাহাবা তাবেয়ীনের অধিকাংশের বক্তব্য ও আমল দ্বারা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত যে, ফজরের সুন্নত ফরযের আগে পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের আগে তা পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।
আর প্রশ্নপত্রের সাথে সংযুক্ত লিফলেটে ফরযের পর সূর্যোদয়ের আগে সুন্নত পড়ার স্বপক্ষে যে হাদীস পেশ করা হয়েছে সনদের বিচারে তা সহীহ নয়। খোদ ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেছেন, এ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়। হাদীসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত তাইমী রাহ. কায়েস রাহ. থেকে কোনো হাদীস শুনেননি। সে মতে এ হাদীসটি منقطع যা পূর্বোক্ত মারফু মুত্তাসিল হাদীসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আর বায়হাকীর রেওয়ায়েতের বর্ধিত অংশ “ফজরের দুরাকাতও পড়া যাবে না” দলীলযোগ্য নয়। কেননা মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী এ অংশটি সহীহ নয়। স্বয়ং ইমাম বায়হাকী রাহ. এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন, আবু আহমাদ বলেন, মুসলিম ইবনে খালিদের সূত্রে আমর থেকে এ হাদীস যারা বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে নসর ব্যতিত অন্য কেউ তার বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেছে বলে আমি জানি না। তিনি আরো বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, আহমদ ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন নসর ইবনে হাজিব থেকে! কিন্তু এটা ভুল (وهم)।
এ ছাড়া নসর ইবনে হাজিব আল মারওয়াযী শক্তিশালী রাবী নন। তার পুত্র ইয়াহইয়াও অনুরূপ। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ২/৪৮৩)
প্রকাশ থাকে যে, কিছুদিন যাবত একটি ভ্রান্তদল লিফলেটে একটি মাসআলা প্রচার করছে যে, মসজিদে এসে যদি দেখা যায় যে জামাতের দুই/এক মিনিট সময় বাকি আছে তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবে না।
প্রশ্ন হল, এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এ ধরনের কোনো কথা কি সাহাবা তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে?
হাদীস শরীফে তো ইকামত শুরু হলে সুন্নত নফল শুরু করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইকামত শুরুর দুই/ এক মিনিট আগে থেকে সুন্নত নফল শুরু করা যাবে না -এমন কথা তো হাদীস আসারে নেই। তারা কী করে তা বললেন?
এর চেয়েও অধিক মনগড়া কথা হল “সুন্নত পড়া অবস্থায় যদি একামত শুরু হয়ে যায় আর সুন্নত আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম রাকাতে থাকে বা মাত্র প্রথম রাকাত শেষ হলো তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন” এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এটা তো বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশনাولا تبطلوا أعمالكم(তরজমা. আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না) এর ব্যাপকতার বিরোধী।
ইমাম জাসসাস রাযী রাহ. বলেন, এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্বসহ যে কোনো সওয়াবের কাজ শুরু করেছে তা পূর্ণ করার আগে বাতিল করা জায়েয নয়। (আহকামুল কুরআন ৩/৩৯৩)
অনুরূপ কথা ইমাম কুরতুবী রাহ.ও বলেছেন। (দেখুন, আল জামে লিআহকামিল কুরআন ১৬/১৬৮)
ইবনে কুদামা রাহ. বলেন, নফল পড়া অবস্থায় একামত হয়ে গেলে এবং জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে তা পূর্ণ করবে, তা বাতিল করবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ولا تبطلوا أعمالكم (আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না।)
-আলমুগনী ২/১২০; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৪১৩৬, ১০/৩২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৯৩৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ২৩৯৬
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!