কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, প্রচার করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।
কথিত আহলে হাদীস ওরফে লা-মাযহাবি ভাইয়েরা! কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন!
বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে
৩১
ইমাম সাহেবের বিসমিল্লাহ আস্তে পড়ার কথা সহীহ মুসলিমের ১ম খন্ডের ১৭২ নং ও মুসনাদে আহমাদের ৩য় খন্ডের ১১৪নং পৃষ্ঠায় এসেছে। ইমাম সাহেবের জোরে বিসমিল্লাহ পড়া বেদআত, একথা এসেছে সুনানে তিরমিজীর ১ম খন্ডের ৬২পৃষ্ঠায় এসেছে।
গায়রে মুকাল্লিদগণ এ সুন্নাতের খেলাফ আমল করেন কোন হাদীসের ভিত্তিতে?
৩২
একা একা নামায আদায়কালে বিসমিল্লাহ আস্তে পড়ার কথা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
৩৩
নামাযে বিসমিল্লাহ পড়ার বিধান কি? ফরজ না সুন্নাত? না পড়লে কি নামায হবে না হবে না? এসব কথা কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে
৩৪
একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি প্রতিটি নামাযেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা আস্তে আস্তে পড়ে থাকে, এর দলিল কোন সহীহ সরীহ হাদীস?
৩৫
পানির যেমন প্রতিটি ফোটাই পানি, তেমনি কুরআনের প্রতিটি অংশই কুরআন। তাহলে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে যে, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ তথা কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। {সূরা মুজ্জাম্মিল-২০}
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল যে, কুরআন পড়া ফরজ। কোন নির্দিষ্ট অংশ পড়া আবশ্যক নয়। গায়রে মুকাল্লিদগণ এ আয়াত না মেনে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক বলে, তা না পড়লে নামায হবে না বলে কেন?
৩৬
সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ একথা কোন সরীহ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত?
৩৭
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যে নামাযে ফাতিহা না পড়া হয়, সে নামায অপূর্ণাঙ্গ। {সহীহ মুসলিম-১/১৬৯}
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না বলে রাসূল সাঃ এর বিরোধীতা করে কেন?
৩৮
أبو هريرة قال قال لى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ্র اخرج فناد فى المدينة أنه لا صلاة إلا بقرآن ولو بفاتحة الكتاب فما زاد
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ আমাকে বললেনঃ তুমি বের হয়ে মদীনায় ঘোষণা দাও যে, কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া নামায হয় না। অন্তত সূরা ফাতিহা এবং এছাড়া অতিরিক্ত কিছু হোক মিলাতেই হবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৮১৯}
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, ফাতিহা পড়া ফরজ নয়। মুতলাকভাবে কুরআন পড়া ফরজ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদগন এ হাদীস মানে না কেন?
৩৯
রাসূল সাঃ নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার যেমন গুরুত্বারোপ করেছেন, ঠিক তেমনি ফাতিহার সাথে আরো কিছু অংশ মিলানোরও গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৮২০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২১৯১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৫২৯, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১২৬, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৬৪৩।
এ কারণেই হানাফীগণ নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াকে যেমন ওয়াজিব বলে, তেমনি এর সাথে অতিরিক্ত আরো কিরাত পড়াকেও ওয়াজিব বলেন।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সূরা ফাতিহার সাথে অতিরিক্ত আয়াত পড়া ওয়াজিব হওয়াকে অস্বিকার করে সরাসরি হাদীসের সাথে বিদ্রোহ করছে কেন?
৪০
ইমাম আহমাদ রহঃ বলেন, আমি আহলে ইসলামের অন্তুর্ভূক্ত কাউকে একথা বলতে শুনিনি যে, যারা বলেন যে, “ইমাম যখন জোরে কিরাত পড়ে, আর মুক্তাদী তার পিছনে কিরাত না পড়ে, তার নামায ভেঙ্গে যায়”।
তিনি আরো বলেনঃ “রাসূল সাঃ এবং তার সাহাবাগণ, এবং তাবেয়ীগণ, আহলে হেজাজের ইমাম মালিক রহঃ, ইরাকের ইমাম সাওরী রহঃ, শামের অধিবাসী ইমাম আওযায়ী রহঃ, মিসরের অধিবাসী ইমাম লাইস রহঃ, তাদের কেউ একথা বলেন নি যে, যখন কোন ব্যক্তি নামায পড়ে, আর তার ইমাম কিরাত পড়ে, আর মুক্তাদী কিরাত না পড়ে, তাহলে তার নামায বাতিল। {মুগনী লিইবনে কুদামা-১/৬০২}
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলঃ পুরো উম্মতের খিলাফ গায়রে মুকাল্লিদরা হানাফীদের নামাযকে বাতিল বলে অপপ্রচার করতে লাগল। এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জবাজী শুরু করে দিয়েছে। শত শত ইস্তেহার প্রকাশ করছে।
এর জবাবে পাকিস্তানের মুহাদ্দিসে আজম শাইখুল হাদীস সরফরাজ খান সফদর রহঃ যখন আহসানুল কালাম লিখলেন, তখন গায়রে মুকাল্লিদরা হাতিয়ার ফেলে আত্মসমর্পণ করলেন।
গায়রে মুকাল্লিদ আলেম হাফেজ মুহাম্মদ কান্ধলবী, মাওলানা ইরশাদুল হক আসরী সাহেব পরিস্কার ভাষায় লিখলেন যে, “ইমাম বুখারী রহঃ থেকে নিয়ে বর্তমান জমানা পর্যন্ত কোন মুহাক্কিক আহলে হাদীস আলেমদের লিখায় এ দাবি করা হয়নি যে, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায বাতিল তথা তার নামায হয়নি”। {তাওযীহুল কালাম-১/৯৯}
“ইমাম বুখারী রহঃ থেকে নিয়ে সমস্ত মুহাক্কিক আহলে হাদীস আলেমদের মাঝে আজ পর্যন্ত একথা কেউ বলেনি যে, ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না”। {তাওযীহুল কালাম-১/৫১৭}
তাওযীহুল কালামের ৪৩ নাম্বার পৃষ্ঠায় যারা নামায হয় না বলে মত দেন, তাদের গায়রে যিম্মাদার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের কাছে যিম্মাদার এমন অনেক আহলে হাদীস আলেমগণ আল্লাহর চেয়ে জনগণকে বেশি ভয় পেয়ে এখনো একথার প্রচার করছে যে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না।(চলবে ইনশাআল্লাহ)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!