প্রশ্ন: একটি কথা আমরা আলেমদের মুখে শুনেছি যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ চল্লিশ বছর পর্যন্ত ইশার অজু দিয়ে ফজরের নামায পড়েছেন। রাতের বেলা প্রায়ই এক রাকাতে এক খতম করে কুরআন পড়তেন।আর তিনি যেখানে ইন্তেকাল করেছেন, সেখানে তিনি সত্তর হাজার বার কুরআন খতম করেছেন।
ইদানিং কিছু আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করছেন এটি ভুয়া কথা। এর কোন প্রমাণ নেই।
দয়া করে এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
কুপের ব্যাঙ এর কাছে কুপটাই বিশাল।
এটাকেই সে মনে করে সুবিশাল জগত। ঠিক তেমনি পাপিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বুজুর্গদের বিশাল আমলতো অসম্ভবই মনে হবে।
যারা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মত হিম্মত রাখে না, তাদের কাছে চল্লিশ বছর পর্যন্ত রাত্রিবেলা লাগাতার ইবাদতকে অসম্ভবই মনে হবে। এটাই স্বাভাবিক।
যাইহোক, উক্ত কথাটি কোন মনগড়া কথা নয়। এটি দলীল সমৃদ্ধ কথা।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ চল্লিশ বছর পর্যন্ত ইশার অজু দিয়ে ফজরের নামায এবং প্রায়ই রাতের বেলা এক রাকাতে এক খতম কুরআন পড়েছেন।
আর যেখানে ই্ন্তেকাল করেছেন সেখানে সত্তর হাজার বার কুরআন খতম করেছেন।
সত্তর হাজার বারের কথাটি দুর্বল। সাত হাজার বারের কথাটি সহীহ। অর্থাৎ ইন্তেকালের স্থানে তিনি সাত হাজার বার কুরআন খতম করেছেন।
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এর সংকলিত গ্রন্থ “তাবয়ীজুজ সাহীফাহ ফী মানাকিবিল ইমাম আবী হানীফা" গ্রন্থে সনদসহ উক্ত বক্তব্যটি নকল করেছেন।
যার সনদসহ আরবী পাঠ হল,
وروى الخطيب عن حماد بن قريش قال: سمعت اسد بن عمرو يقول: صلى ابو حنيفة فيما حفظ عليه صلاة الفجر بوضوء العشاء اربعين سنة، وكان عامة الليل يقرأ جميع القرآن فى ركعة واحدة، وكان يسمع بكاؤه فى الليل حتى يرحمه جيرانه، وحفظ عليه انه ختم القرآن فى الموضع الذى توفى فيه سبعين الف مرة، (تبييض الصحيفة فى مناقب الامام ابى حنفية-28)
খতীব বাগদাদী হাম্মাদ বিন কুরাইশ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আসাদ বিন আমর থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমার জানা মতে ইমাম আবু হানীফা রহঃ চল্লিশ বছর পর্যন্ত ঈশার অজু দিয়ে ফজরের নামায পড়েছেন। আর তিনি স্বভাবতঃ রাতের বেলা এক রাকাতে পুরো কুরআন খতম করতেন। আর লোকেরা রাতের বেলা তার ক্রন্দন শুনতে পেতো। এমনকি প্রতিবেশীরা পর্যন্ত তার উপর দয়ার্দ্র হয়ে পড়তো তার কান্না দেখে।
আর তিনি যে স্থানে ইন্তেকাল করেছেন, উক্ত স্থানে সত্তর হাজার বার কুরআন খতম করেছেন। {তাবয়ীজুজ সাহীফাহ ফী মানাকিবী ইমাম আবূ হানীফা-২৮}
আর তারীখে বাগদাতে এসেছে সাত হাজার বারের কথা। এ বক্তব্যটিই সঠিক। দেখুন-{তারীখে বাগদাদ-১৩/৩৫৪}
তাহযীবুল কামাল-২৯/৪৩৪}
সনদসহ বর্ণিত উক্ত বক্তব্যকে ভূয়া সাব্যস্ত করা নিজের অজ্ঞতা ও মুর্খতা প্রকাশ বৈ কিছু নয়।
والله اعلم بالصواب
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!