স্বামীর করনীয় :
★ স্বামী হিসেবে নিজেকে পরিবারের প্রধান দায়িত্বশীল মনে করুন।
★ পরিবারে দায়িত্ব পালনকে ইবাদত মনে করুন।
★ স্ত্রীকে বন্ধু, জীবনসঙ্গী ও ঘরের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করুন।
★ পারিবারিক প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।
★ স্ত্রীর ভালো কাজ, অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা করুন।
★ স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন; ভালবাসা ও অনুরাগ কথা ও আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করুন।
★ কর্মস্থল বা বাইরের রাগ-ক্ষোভ ঘরের স্ত্রী, সন্তান বা গৃহকর্মীর ওপর প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।
★ নিজের ভুল নিঃসঙ্কোচে স্ত্রীর নিকট স্বীকার করুন। অন্যায় করলে মাফ চেয়ে নিন।
★ আয় অনুসারে স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণ, ছোট-খাটো উপহার প্রদান ও হাত-খরচা প্রদান করুন এবং হাত-খরচা ব্যয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকুন।
★ স্ত্রীর অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ে স্ত্রীর স্বাধীনতা হরণ করবেন না।
★ স্ত্রীর যুক্তিসঙ্গত আবদার পূরণে সচেষ্ট থাকুন।
★ নিজের আয় সম্পর্কে প্রথম থেকেই স্ত্রীকে সুস্পষ্ট ধারণা দিন ও অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জন করা থেকে বিরত থাকুন।
★ পেশাগত বা পারিবারিক সংকট দেখা দিলে স্ত্রীর সাথে তা খোলামেলা আলোচনা করুন।
★ আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দেয়া বা সাহায্য করার ব্যাপারে স্ত্রীকে অযৌক্তিক বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
★ স্ত্রীর আত্মীয়দের নিয়ে তাকে কথা শোনাবেন না।
★ স্ত্রীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো শ্রদ্ধা করুন।
★ ঘরের খুঁটিনাটি ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন। ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন।
★ স্ত্রীর ভুল-ত্রুটি নিয়ে সন্তানদের সামনে ভর্ৎসনা করবেন না।
★ অকারণে কোনো বিষয় স্ত্রীর কাছে গোপন করবেন না।
★ সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে কাটান। ঘরের প্রতিটি কাজ- এমনকি রান্না-বান্নায়ও পিকনিকের মতো অংশ নিন। গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়াসহ নিজের ছোটখাটো কাজ নিজে করুন।
★ স্ত্রীর যে কোনো ভুল-ত্রুটিকে সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করুন এবং রূঢ় ভাষায় সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন।
★ বাইরে কাজ আছে বলে ক্লাবে বা ‘বন্ধু’দের সাথে তাস খেলে বা ফালতু আড্ডায় সময় নষ্ট না করে পরিবারের আত্মিক ও মানসিক উন্নতির জন্যে সময় ব্যয় করুন।
★ অন্যের কাছে স্ত্রীর বদনাম করবেন না।
★ অর্থ অপচয় করবেন না। আবেগপ্রসূত কেনাকাটা পরিহার করুন।
★ নিজের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
★ স্ত্রীর শারীরিক খোঁজ-খবর নিয়মিত জিজ্ঞেস করুন।
অসুস্থ হলে নিজে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
★ স্ত্রীর যে কোনো অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কোনো প্রস্তাব বা কথায় প্রথমেই ‘না’ বলা থেকে বিরত থাকুন।
★ স্ত্রীকে গৃহকর্মে ও সন্তান পালনে সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন।
স্ত্রীর করনীয় :
এক আরব মা তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর উপদেশ দিচ্ছেন :-
উমামা বিনতে হারেছ নিজ কন্যার বিবাহের সময় তাকে এমন কিছু নসীহত করেন যা শুধু মেয়ের জন্যই নয়; বরং পরবর্তী সমস্ত নারীর জন্য মাইল ফলক হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে। তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে বলেন, ওহে আমার কলিজার টুকরা মেয়ে! আজ তুমি নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবী ও প্রতিবেশী থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে এমন এক অপরিচিত পরিবেশে এমন এক অপরিচিত ব্যক্তির নিকট গমণ করছো যেখানেই রয়েছে তোমার আসল ঠিকানা সেই ব্যক্তিই তোমার প্রকৃত বন্ধু সাথী ও কল্যাণকামী। তুমি ওখানের আচার আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে মোটেও অবগত নও। তুমি যদি স্বামীর দাসী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার, তবে দেখবে সেও তোমার দাসে পরিণত হয়েছে।
এই মূহুর্তে আমি তোমাকে কতিপয় নসীহত করছি। আল্লাহ চাহে তো এগুলো তোমার জীবনের সাফল্য ও সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য পাথেয় হবে।
★ স্বামীর প্রতি বিনীত থাকবে এবং অল্পতেই তার উপর সন্তুষ্ট হবে।
★ ভালভাবে তার কথা শুনবে ও মানবে।
★ তার চোখ ও নাকের পসন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তোমাকে যেন কখনো খারাপ দৃশ্যে সে না দেখে এবং তোমার নিকট থেকে কখনো যেন সর্বোত্তম সুগন্ধি ছাড়া অন্য কিছু না পায়।
★ তার খাওয়া দাওয়া ও নিদ্রার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবে। কেননা ক্ষুধা ও অনিদ্রা মানুষকে বদমেজাজী ও ক্রোধাম্বিত করে তোলে।
★ তার ধন-সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণ করবে। হিসাবের সাথে পরিমাণমত তার সম্পদ খরচ করবে।
★ তার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীর দেখাশোনা করবে। উত্তমভাবে মনযোগসহকারে তার সন্তান-সন্তুানতিকে লালন-পালন করবে।
★ তার কোন গোপন বিষয় ফাঁস করবে না ও তার নাফরমানী করবে না। কেননা তার গোপন তথ্য ফাঁস
করে দিলে একদিন সে তোমাকে ধোঁকা দিবে। অবাধ্য হলে তার বুকে আগুন জ্বালাবে তাকে ক্রোধাম্বিত
করবে।
★ তুমি কাংখিত লক্ষ্যে কখনোই পৌঁছতে পারবে না যে পর্যন্ত তার সন্তুষ্টিকে নিজের সন্তুষ্টির উপর এবং তার পছন্দ-অপছন্দকে নিজের পছন্দ-অপছন্দের উপর প্রাধান্য না দিবে।
(আ’লামুন্নেসা ১/৭৪,ত্বাবায়েউন্নেসা পৃঃ ২৮)
স্বামীর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীকে কতিপয় উপদেশঃ
শায়খ ইবনু জুবাইলান স্বামীর ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ
★ বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।
★ স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা। তার হাতে কোন কিছু থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
★ সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।
★ স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন)।
রান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
★ সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।
★ স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরেরপোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।
★ স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা।
নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।
★ সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।
★ নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।
★ সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
★ কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্ বলেন “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না। (সূরা-হুজুরাত-১৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড়মিথ্যা।
(বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/৪৭৪৭।)
★ স্বামী কখনো রাগম্বিত হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।
★ স্বামীর মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।
★ সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (বুখারী ও
মুসলিম)।
★ স্বামীর নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।
পরিশেষে দুয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন,আমীন। (সংগৃহিত)
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!