জাকির নায়েকের ইতিহাস হৃদয় বিদারক ইতিহাস। এক আত্মঘাতী ইতিহাস। এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ ইতিহাসও বটে। তবে ইসলামের জন্য এই আত্মঘাতী ইতিহাস নতুন কিছু নয়। এই পরম্পরা বহু পুরনো। বহু আগের। যুগে যুগে সময়ে সময়ে নতুনভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে বারবার এই আত্মঘাতী ইতিহাসটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বিজলির মতো ঝিলিক মেরে উঠেছে। চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। হতাশ করে দিয়েছে। দিগভ্রান্ত করে দিয়েছে। উদ্বাস্তু করে দিয়েছে। ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এবং ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। সামনেও দিবে।
জাকির নায়েকের শুরুটা ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ। ঈর্ষনীয়। চোখ ধাঁধানো। মন মাতানো। তাক লাগানো। কী প্রভাবই-না ফেলেছিলেন তিনি জগত জুড়ে! পাগল করে দিয়েছিলেন বিশ্বকে! হিন্দু বোদ্ধ খৃষ্টান শিক্ষিত-অশিক্ষিত আওয়াম-খাওয়াস কেউই বাদ যায়নি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া থেকে। এমনকি দ্বীন-ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী আলেমসমাজও! তাঁর ভাষা, যুক্তি, উপস্থাপনা, উপস্থিত জ্ঞান, সাময়িক সমাধান মানুশকে হতভম্ব করে দিয়েছিলো। প্রশংসার ঝুলি উতরে দিয়োছিলো মানুশ তাঁকে। পঞ্চমুখ হয়েছিলো মানুশ তাঁর প্রশংসায়। মানুশের রক্তমাংসে মিশে গিয়েছিলো তাঁর নাম। চারিদিকে মুখরিত ছিলো তাঁর সুনাম।
কিন্তু ধীরে ধীরে যখন বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম পর্দার আড়ালে থাকা তাঁর আসল চেহারা দেখতে পেলেন এবং ইসলাম ও ইমান বাঁচাতে তাঁর মুখশ উন্মোচন করতে শুরু করলেন, দ্বীন-ইসলামের ব্যাপারে তাঁর বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে লাগলেন, তখনি সৃষ্টি হলো মারাত্মক গণ্ডগোল। উদ্ভব হলো এক ভ্রান্ত দল। শুরু হলো তাদের উলামা বিদ্বেষ। সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিলো তারা উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে। কাফের মুশরিক মুনাফিক যাচ্ছেতাই বলে গালি দিতেও পিছপা হয়নি তারা। এহেন কোনো মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রোপাগান্ডা নেই যা তারা উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ছড়ায়নি। ইসলামকে উলামা মুক্ত করতেও তারা ছিলো রীতিমতো সিদ্ধহস্ত।
অবস্থা এবং পরিস্থিতি এতই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জাকির ভক্তদলের সামনে সরাসরি কুরআন-হাদিসের কথাও টিকছিলো না। সরাসরি কুরআন-হাদিস মানিনা না-বললেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বসেছিলো প্রায়। জাকির নায়েকই ঠিইক! সে-ই ইসলামের দলীল! সে যা বলবে তাই সত্য! তাই ইসলাম! এধরণের মারাত্মক গোঁড়ামিপূর্ণ মনোভাব জন্মেছিলো তাদের। উলামায়ে কেরামের প্রাণপণ চেষ্টা-মেহনতের ফলে মানুশের কাছে বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। তবে কিছু জাকিরভক্ত রয়েই গেছে। সময়ে সময়ে এখনো তাদের কুৎসিত চেহারা ভেষে উঠে।
তদ্রূপ জাকির নায়েকের পথেই হাঁটছেন হঠাৎ জনপ্রিয় বক্তা মিজান আজহারী। তড়িৎ জনপ্রিয়তার সাথে সাথে তিনি নিজের স্বাভাবিক ভারসাম্যতাও হারিয়ে ফেলছেন মনে হচ্ছে। প্রথমে রসূল সা. তারপর সাহাবা কেরাম, পরে উম্মাহাতুল মুমিনীনদের ব্যাপারে লাগামহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং কুরুচিপূর্ণ কটুবাক্য ব্যবহার, এখন আবার নামাজ এবং পর্দা নিয়ে মনগড়া কথাবার্তা তার ভারসাম্যহীনতার কথাই জানান দিচ্ছে।
এখনই যদি আমরা আজহারী সাহেবকে তার এসব মনগড়া কথাবার্তা থেকে বিরত হতে এবং তার অনধিকার চর্চা হতে বাধা না দেই, তবে খুব শীঘ্রই জাকির নায়েক ফেতনার মতো আরেকটি নব্য ফেতনার আবির্ভাব ঘটবে। এবং ঘটতে বাধ্য। ঘটলে এরজন্য দায়ী থাকবো আমরাই।
তাই অবশ্যই তরুণ আলেদেরকে আজহারী সাহেবের মুখোমুখি হয়ে বিষয়টি সুরাহা করা উচিৎ। তাঁকে বুঝানো উচিৎ। তার উদ্দেশ্য-আদর্শ সম্পর্কেও আমাদের অবগত হওয়া উচিৎ। এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটার আগেই আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ।
২৪.১২ ১৯
নাবিল আব্দুল্লাহ
0 Comments:
একটা ভাল মন্তব্য আমাদের আরও ভাল কিছু লিখার অনুপেরনা যাগাই!